উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের আবর্জনার জন্যে স্থানীয় কৃষকদের শতশত একর কৃষিজমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দূষিত বর্জ্যের কারণে নদী-খাল পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত ড্রেনে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিষাক্ত পানি জমিতে পড়ায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে স্থায়ীভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাজারও কৃষক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার আগে প্রতি বছর এসব জমিতে তিন ধরনের ধান ও নানা মৌসুমি সবজি চাষ হতো। এখন প্রায় ২০ একর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। যতই পরিষ্কার করা হোক না কেন ক্যাম্প থেকে পলিথিন, বোতল, মেডিকেল বর্জ্য ও বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক আবর্জনা এসে ফসলের জমি সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলছে।
বিজ্ঞাপন
কুতুপালংয়ের কৃষক আহসান উল্লাহ বলেন, গত ৮ বছর ধরে জমিতে চাষ করা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের বর্জ্যের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চাষাবাদ। এতো সমস্যার মধ্যে কেউ কোনো ধরনের সহযোগিতা করছে না। আমরা কৃষকরা খুব কষ্টে আছি।
কৃষক মনির আহমেদ জানান, আবর্জনার কারণে দুই একর জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা খুব অসহায়ত্বের সঙ্গে জীবন পার করছি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এখন তার খেসারত দিতে হচ্ছে।
আরেক কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, যে খালে মাছ ধরতাম, তা এখন নালায় পরিণত হয়েছে। মাছ নেই, পানি বিষাক্ত। কৃষিজমি ও নদী-খাল সবই শেষ।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, ২০১৭ সালের আগে বালুখালীর বড় খালটি ছিল মাছের জন্যে খুব উপযোগী। একেবারে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছিল খালের চারপাশ। কৃষকেরা সেখান থেকে পানি নিয়ে ধান ও সবজি খেতে পানি দিতেন। এখন সেখান দিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পের আবর্জনা নদীতে চলে যাচ্ছে। খালের পাশের সব জমির ফল-ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নোংরা পানিতে দূষিত হয়েছে সবকিছু।
স্থানীয়দের দাবি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্জ্যের কারণে উখিয়া ও টেকনাফে অন্তত এক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা পাননি তারা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, উখিয়া-টেকনাফে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে ফসলি জমিতে পতিত হচ্ছে। প্রতি বছর বৃষ্টি নামলেই কৃষকদের জমি ডুবে যায় বর্জ্যে। আবর্জনার কারণে এসব চাষাবাদ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রায় কয়েকশ একর জমি নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, রোহিঙ্গাদের বর্জ্যের প্রভাবে কৃষি জমির পরিমাণ ও উৎপাদন উভয়ই কমছে। বিভাগীয় তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে টেকনাফে আবাদি জমি ছিল ১৩ হাজার ৭২৮ হেক্টর, যা ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৬ হেক্টর। একই সময়ে উখিয়ায় ১৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমি কমে ১৬ হাজার হেক্টরে নেমেছে।
সমুদ্র গবেষক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্য নদী হয়ে সরাসরি সাগরে গিয়ে পতিত হচ্ছে। এটি জীব বৈচিত্র্য, মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ক্যাম্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সবার সমন্বয়ে সমাধান বের করার চেষ্টা করব। এনজিও ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস