সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

১২ লাখ টাকায় সৌদি গিয়ে নিখোঁজ দুই ভাই, আরও ১০ লাখ চাইছে দালাল

জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০৪ মে ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

Immigrants

মায়ের কোলো বসে আব্বু আব্বু করে কাঁদছে ৩ বছরের ছোট্ট মেয়ে তাবাসসুম। দীর্ঘ দিন বাবাকে না দেখে তার মনেও জেগেছে সংশয়। কোথায় গেছে বাবা। আর কি ফিরে আসবে না। মেয়েকে সান্তনা দিতে গিয়ে নিজেও কেঁদে ফেলছেন গৃহবধু মোছা. রিনা আক্তার।

গত ১১ মাস আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব যান রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের জালদিয়া গ্রামের দুই চাচাতো ভাই। স্বজনদের দাবি, সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো দালালের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। তিন মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলেও দাবি স্বজনদের।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগী আপন দুই চাচাতো ভাই হলেন- জালদিয়া গ্রামের কামাল মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা ও মৃত ইয়াছিন মোল্লার ছেলে ইকবাল মোল্লা। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।

thumbnail_1000005963

সোহেলের বাবা কামাল মোল্লা বলেন, তার ছেলে সোহেল ও ভাতিজা ইকবলকে সৌদি আরবে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখান প্রতিবেশী মনিরদ্দিন মোল্লা ও তার শ্যালক মামুন মোল্লা। ভাগ্য ফেরাতে মনিরদ্দিন ও মামুনকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে গত বছরের ৯ জুন সৌদি আরবে পাড়ি জমান সোহেল ও ইকবল। সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো দালাল চক্রের নির্যাতনের শিকার হন তারা। কাজ দেয়ার আশ্বাসে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি পরিবারের লোকদের কাছ থেকে আরও দুই লাখ টাকা নেন দালাল মনিরদ্দিন ও মামুন। কিন্তু এরপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সোহেল ও ইকবালের। তিন মাস ধরে তাদের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবারটির। দুই দালালের বিরুদ্ধে গত ২৭ এপ্রিল রাজবাড়ীর বিজ্ঞ মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছেন সোহেলের স্ত্রী রিনা আক্তার।

আরও পড়ুন

দরিদ্রতা দমাতে পারেনি শিশু মাহিনকে

রিনা আক্তার বলেন, তিন মাস ধরে আমার স্বামী ও দেবরের কোনো খোঁজখবর নেই। দালাল মনিরদ্দিন ও মামুন বলছেন তাদের আরও ১০ লাখ টাকা দিলে তারা আমার স্বামী ও দেবরকে এনে দেবেন। আমরা তাদেরকে এ পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন আমরা আরও ১০ লাখ টাকা কোথায় পাব। তাই আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

ইকবাল মোল্লার স্ত্রী সেলিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী ও ভাসুর বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তাতো আমরা জানি না। তিন মাস ধরে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমার ছোট দুই মেয়ে, আমার ভাসুরের ছোট এক মেয়ে। ছোট বাচ্চারা সব সময় তাদের বাবাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়, কান্নাকাটি করে। আমরা দু’টি পরিবার খুব কষ্টে দিন পার করছি। আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমার স্বামী ও ভাসুরকে দেশে ফেরত এনে দেন।

thumbnail_1000005942

সোহেলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের ছেলে দু’টিকে আমরা ফেরত চাই। আর এই দুই দালালের কঠিন শাস্তি চাই। যাতে এদের খপ্পড়ে পড়ে আমাদের মতো অন্য কোনো পরিবার সর্বস্বান্ত না হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মনিরদ্দিন মোল্লা বলেন, সোহেল ও ইকবালকে আমার শ্যালক মামুন বিদেশে পাঠিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সবকিছু মামুন জানে।

অভিযুক্ত মামুন মোল্লা বলেন, সোহেল ও ইকবালকে যে কোম্পানিতে কাজ দিয়েছিলাম সেখানে তারা কাজ না করে পাসপোর্ট ফেরত চায়। পরে এজেন্সির মাধ্যমে ওই কোম্পানির কাছ থেকে তাদের পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে দিয়েছি। এখন আর তাদের বিষয়ে আমার কোনো দায়ভার নেই।

এদিকে, রিনা আক্তারের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন

নাটোরে পুড়ে গেছে ঘর-বাড়িসহ ৯ ছাগল

মামলাটি সঠিকভাবে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে এ কার্যালয়ের পুলিশ সুপারের মো. রবিউল ইসলাম বলেন, মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম আমরা শুরু করব। পিবিআই সব সময় নির্মোহ জায়গা থেকে তদন্ত করে প্রকৃত সত্যকে সামনে আনার এবং প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় চেষ্টা করে। এ মামলাটিও আমরা সঠিকভাবেই তদন্ত করব।

বিদেশ গমনইচ্ছুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা কর্মসংস্থানের জন্য প্রবাসে যাবেন তাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে। দালালদের মাধ্যমে বিদেশে না গিয়ে জনশক্তি রফতানি ব্যুরো ও বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রচলিত নিয়ম মেনে বৈধভাবে বিদেশে যেতে হবে। এতে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ার মতো ঘটনা অনেক কমে আসবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর