সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তদন্তে গিয়ে আনন্দ ভ্রমণ, খোদ অভিযুক্তদের দিয়েই সাক্ষ্য গ্রহণ!

ছায়েদ আহামেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী)
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫২ এএম

শেয়ার করুন:

তদন্তে গিয়ে আনন্দ ভ্রমণ, খোদ অভিযুক্তদের দিয়েই সাক্ষ্য গ্রহণ!
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের নেমপ্লেট এবং অনিয়মে জড়ানো তদন্ত কর্মকর্তা। ছবি: সংগৃহীত

ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে এসে নিজেই দুর্নীতি আর অনিয়মে জড়িয়ে গেলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তদন্ত কর্মকর্তা মো. কফিল উদ্দিন। অভিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে খোশগল্প, মুখরোচক খাওয়া-দাওয়া আর নিঝুম দ্বীপ আনন্দ ভ্রমণেই কেটে যায় তার পুরো দিন। ঘুষের বিনিময়ে খোদ অভিযুক্তদের সাক্ষ্য গ্রহণের তদন্তভার দেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তদন্তের নামে প্রহসনের এমন ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দুই কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীর বিভিন্ন গুরুতর অনিয়ম তদন্তে। ঘটনাটি প্রায় চার মাস আগের হলেও বিষয়টি জানাজানি হয় সম্প্রতি।       


বিজ্ঞাপন


হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আ. জব্বার, সাবেক উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম. নুরেজ্জমান ও উচ্চমান সহকারী নাজিম উদ্দিনের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে  রেকর্ডপত্র ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে একাধিক অনলাইন ও জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। যার সূত্র ধরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রকিউরমেন্ট অফিসার (সাধারণ প্রশাসন) মো. কফিল উদ্দিনকে অভিযোগগুলো সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দায়িত্ব দেয়। এই তদন্ত কর্মকর্তা ঘুষ নিয়ে ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্ধারিত অফিস কক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষা অফিসারকে নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা খোশগল্প ও মুখরোচক খাবার-দাবার সারেন। অপরদিকে পরিকল্পনানুযায়ী অভিযুক্ত উচ্চমান সহকারী নাজিম উদ্দিন কৌশলে তার অফিস কক্ষে আরেক অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক এনায়েতে রাব্বিসহ অনিয়মে সহযোগীদের দিয়ে সাক্ষীদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে তাদের থেকে অভিযুক্তদের পক্ষে লিখিত স্বীকারোক্তি আদায় করে নেন।

গত সরকারের আমলে ২০১৫ সাল থেকে হাতিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনিয়মকে ঘিরে স্থানীয় অপরাধীদের সাথে ঊর্ধ্বতন অফিসের এসব অসৎ কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। সে থেকে এ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের যে কয়জন কর্মকর্তা হাতিয়ায় শিক্ষা অফিসের অনিয়মের তদন্তে আসেন তাদের দুই-একজন ছাড়া সবাই উৎকোচ নিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। একই কায়দায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী অভিযোগের সাথে মোটেও সম্পৃক্ত নয় এমন এক কর্মচারী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোহাম্মদ ছাকায়েত হোসেনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে এই তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তকালে অভিযুক্তদের আশ্বস্ত করেন।

ভুক্তভোগী ছাকায়েত হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে একটি চক্র ভুল বুঝিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে মিথ্যা সৃজনকৃত লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। তাকে যেকোনো মূল্যে ফাঁসানোর জন্য এই চক্রটি ২০১৪ সালে ডিপার্টমেন্টালভাবে ও আদালতিকভাবে নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ে ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করা মাহবুবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব, তার বোন সেলিনা আকতার ও প্রধান শিক্ষক নবীর উদ্দিনকে বাদী করে অভিযোগ দেয়। যার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (চদা.) (প্রশিক্ষণ) আব্দুল আলীম স্বাক্ষরিত নোটিশ দেয় ছাকায়েতকে। নোটিশে তদন্তের জন্য ২৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় হাজির থাকতে বলে পুনরায় আরেকটি নোটিশ দেয় ৫ মে একই সময়ে হাতিয়া রিসোর্সে উপস্থিত থাকার জন্য।

ইতোপূর্বে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া তাকে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে বদলির আদেশ করান। যা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল নম্বর-১ ঢাকা প্রশা. ট্রাই. মামলা নম্বর ৩৮১/২০২১ আদেশে স্থগিত হয়।


বিজ্ঞাপন


ছাকায়েত আরও বলেন, শিক্ষা অফিসে গঠিত এই সিন্ডিকেট জনৈক কর্মকর্তার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দিয়ে এক বছর সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রাখে। সব অভিযোগের ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত হয়। ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি হাতিয়া ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ২৪ নাম্বার আদেশে মামলার রায়ে খালাসপ্রাপ্ত হন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশে সব বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করেন। সে আলোকে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তির কাজ বর্তমানে চলমান বলে জানান তিনি।

হাতিয়া উপজেলার পিটিআই (ডিপিএড/সিইনএড) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিম্ন ধাপে বেতনভোগী প্রায় ৬০০ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষকদের চাকরির খতিয়ান বহিসহ সকল রেকর্ডপত্র থাকে অফিসে। তাদের একসাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেলে বেতন নির্ধারণ ও বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে বকেয়া বিল প্রদানের কথা থাকলেও ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত দুই বছরে একজন করে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে ৪০০ জন শিক্ষক থেকে ২০ হাজার টাকা করে উৎকোচ আদায় করেন অভিযুক্তরা। ইতঃপূর্বে বাবর উদ্দিন নামের আফাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেলে বেতন নির্ধারণ ও বকেয়া বিল বাবদ ঘুষ গ্রহণের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যের ছয় মিনিট ১০ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ড ও তথ্য-উপাত্ত প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তকালে অনিয়ম-দুর্নীতি উদঘাটনের কোনো চেষ্টা না করে উপরন্তু অভিযুক্তদের দ্বারা কিছু সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে তদন্তে তাদের রক্ষার আশ্বাস দেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।  

এ তদন্তে অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী মেহেদী হাসান বলেন, ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি জেলা সদরে ছিলেন। এদিন অধিদফতর থেকে এক তদন্ত কর্মকর্তা আসবে বলে টিইও আ. জব্বার ভোর বেলা তাকে দ্রুত কর্মস্থলে হাজির হতে বলেন। সাড়ে ১০টার মধ্যে কর্মস্থলে এসে তদন্ত কর্মকর্তা নামক কাউকে তিনি দেখতে পাননি বলে জানান এই হিসাব সহকারী। এ সময়ে তাকে কোনো কর্ম বণ্টন আদেশ না দিয়ে অফিসিয়াল কার্যক্রম থেকে দূরে রাখলেও এদিন শিক্ষা কর্মকর্তা আ. জব্বার, উচ্চমান সহকারী নাজিম উদ্দিন ও সহকারী শিক্ষক এনায়েতে রাব্বি তাকে কাজ দিয়েছেন মর্মে লিখিত নিয়ে নেন। তদন্ত কর্মকর্তা মো. কফিল উদ্দিন তখন নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে গিয়ে এই অভিযুক্তদের দ্বারা সাক্ষ্য নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন মর্মে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, নাজিম উদ্দিন এবং শিক্ষক এনায়েতে রাব্বী-নিরীহ শিক্ষকদের থেকে টাকা আদায় করে তার একটা ভাগ শিক্ষা অফিসারকে দেন। বিভিন্ন সময় এ অভিযুক্ত সিন্ডিকেট তাকে নানাভাবে টর্চার করেছে বলে জানান। এবং কাজ না দেওয়ায় বসে থাকতে হয় বলে অনেক সময় শিক্ষকরা তার সাথে অশোভন আচরণ করে থাকে বলেও উল্লেখ করেন এ হিসাব সহকারী।

এছাড়া তদন্তে অনিয়মের বিষয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, তদন্ত কর্মকর্তা মো. কফিল উদ্দিন হাতিয়া আসার বিষয়ে তিনি আগে জানতেন না। তদন্তের দিন কফিল উদ্দিন টিইওর রুমে বসে কথা বলছেন আর উচ্চমান সহকারীর রুমে সাক্ষীদের থেকে সাক্ষ্য নিয়েছেন নাজিম উদ্দিন ও সহকারী শিক্ষক এনায়েত রাব্বী। এরই ফাঁকে তদন্ত কর্মকর্তা নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে চলে গেছেন বলে জানান তিনি। একইরকম মন্তব্য করেন আরেক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আকবর হোসেন।

নিঝুম দ্বীপ বাতায়ন কিল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক অভিযোগ করে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত ২০ জুন, ২০২৩ তারিখের এক আদেশ মোতাবেক এই শিক্ষকের বেতনভাতাদিসহ যাবতীয় তথ্যাদি অনলাইনে বদলি করা বিদ্যালয়ে দেওয়া থাকলেও কোনো আদেশ ছাড়া তাকে দিয়ে আগের স্কুলে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। শিক্ষা অফিসের নানাবিধ অনিয়মের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৯ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন দেন এই শিক্ষক। ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ. জব্বারের সাথে এ শিক্ষকের পাঁচ মিনিট ৭ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটা অডিও রেকর্ড পায় এই প্রতিবেদক। সেখানে এ শিক্ষক অধিদফতরের পরিপত্র দেখাতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা আ. জব্বার এ শিক্ষককে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য উত্তেজিত হয়ে বারবার ধমক দিতে শোনা যায়। তার আগেও এ শিক্ষা কর্মকর্তা ও উচ্চমান সহকারী দুজনে মিলে ভুক্তভোগী এ শিক্ষককে অফিসে ডেকে এনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর শিক্ষকের আবেদনের কারণে তাকে ফৌজদারি মামলা করার হুমকি দেন। এ শিক্ষা অফিসার যোগদানের পর থেকেই উচ্চমান সহকারীসহ এভাবে শিক্ষকদের নানাভাবে হেনস্তা করে আসছেন বলে জানান শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক।

এ তদন্তের অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, তার করা অভিযোগ তদন্তের জন্য ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে অধিদফতরের তদন্ত কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন হাতিয়া শিক্ষা অফিসে ও পরে দুপুর ১২টায় নিঝুম দ্বীপ এলেও তাকে (আবু বক্কর ছিদ্দিককে) তদন্তে পর্যন্ত ডাকেননি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্লিপ বরাদ্দ থেকে গণিত অলিম্পিয়াডের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের নামে স্লিপ অ্যাকাউন্টের চেক থাকা সত্ত্বেও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষা অফিসের হিসাব নম্বরের একটি করে চেক দিয়ে ২২৭টি বিদ্যালয় থেকে কৌশলে ছয় হাজার টাকা করে আদায়ের পর মাত্র দুই হাজার টাকার নিম্নমানের উপকরণ ক্রয়ে শিক্ষা অফিস শিক্ষকদের বাধ্য করে। এ অভিযোগ তদন্তেও কোনো বিদ্যালয়ে না গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার নির্দেশে অভিযুক্তরা অফিসে বসে শিক্ষকদের ধমক দিয়ে তাদের পক্ষে লিখিত আদায় করে নেন।

উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি কাম প্রহরী (আউটসোর্সিং) পদে নিয়োজিত ৯৭ জন কর্মচারীর বেতন বিল অ্যাকাউন্ট অফিসে পাঠাতে উচ্চমান সহকারী নাজিম উদ্দিন সবসময় গড়িমসি করেন। দায়িত্বে অবহেলা করে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের বেতন বিল এক মাস পর অক্টোবরে উপজেলা হিসাব রক্ষণে পাস হয়। কাম প্রহরীদের এভাবে হয়রানির এমন অভিযোগের বিষয়েও ভুক্তভোগীদের থেকে অভিযুক্তরা তাদের পক্ষে লিখিত আদায় করে নেন।

আরও পড়ুন

নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে বেপরোয়া রামেক হাসপাতাল প্রশাসন!

চেয়ারম্যান-বিএনপি নেতার ‘কারসাজি’, সরকারি চাল পাননি কয়েক গ্রামের মানুষ

সাবেক উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম. নুরেজ্জামান হাতিয়া ইউআরসিতে অনুষ্ঠিত প্রাক-প্রাথমিকের ১৫ দিনের প্রশিক্ষণের নবম দিন থেকে ১৫তম দিন পর্যন্ত সাত দিন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত ছিলেন। অথচ দায়িত্বে অনুপস্থিত থেকে একই সময় ২০২৪ সালের মে মাসের ২ তারিখ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত তিনি মাইজদী পিটিআই নোয়াখালীর ২৯ এপ্রিল এক স্মারক মূলে বিটিভিটি কার্যক্রমের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে তিন দিনের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় একই তারিখে এবিএম.নুরেজ্জমান দুই জায়গা থেকে দুই দিনের প্রশিক্ষণ ভাতা গ্রহণ করেন।

এবিএম. নুরেজ্জামানকে শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আ. জব্বার গত বছরের ১৭ ও ১৮ মে এবং ৯ জুন তারিখে হাজিরা খাতায় লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত দেন। আ. জব্বার পরে  ঘুষ নিয়ে ফ্লুইড মেরে নৈমিত্তিক ছুটি লিখে নিয়মিত বেতন দেওয়াকে তদন্তে অভিযুক্তের স্বপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ গ্রহণ করে এ তদন্ত কর্মকর্তা।

মধ্য চর আমানুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফয়সাল ইসলামকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আ. জব্বার ২০২৪ সালের ৪ মার্চ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে স্মারক নম্বর বিহীন কৈফিয়ত তলবের চিঠি দেন। উচ্চমান সহকারী মো. নাজিম উদ্দিন ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি হাতিয়াতে যোগদানের পর থেকে শিক্ষকদের এভাবে স্মারক নম্বরবিহীন পত্র দিয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নানাবিধ কৌশলে ছেড়ে দেন বলে জানান ফয়সাল ইসলাম।

একইভাবে কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মহিমা বেগম শিক্ষা অফিসে মাসোয়ারা দিয়ে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ডিসেম্বর, ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি,২০২৫ পর্যন্ত এক বছরের তিন মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত। হাজী লাল মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষককে ১১ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ পর্যন্ত ১৬ দিন অনুপস্থিতির কৈফিয়ত তলব করেও ঘুষ নিয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে নিয়মিত বেতন দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে শিক্ষা অফিসার আ. জব্বার ও নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ টাকার ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দের টাকাকে প্রথম কিস্তিতে চেক দিতে গিয়ে প্রতি বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে নাজিম উদ্দিন ১১ হাজার টাকা করেন। গত সপ্তাহে দ্বিতীয় কিস্তির চেক দিতে ১০ হাজার করে টাকা আদায় করে নেন বলেও জানান একাধিক শিক্ষক।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তা কফিল উদ্দিনের তদন্তে নানাবিধ অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় এ প্রতিবেদক গেল বছরের ১৮ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তদন্ত ও শৃঙ্খলা সেলে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ৪৮ পাতা প্রেরণ করলেও এ দফতরগুলো অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

তদন্তে অনিয়মের বিষয়ে মো. কফিল উদ্দিন মোবাইল ফোনে জানান, নিঝুম দ্বীপ গিয়েছেন সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে তদন্তে সাক্ষীদের স্বাক্ষরকৃত জবাব তার কাছে রয়েছে বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগীরা জানান, অপরাধীদের ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দেশব্যাপী তদন্তের নমুনা যদি এতই বেহাল হয় তবে কীভাবে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নত হবে? অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ও এসকল অনিয়মের মূল হোতা উচ্চমান সহকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রশাসন ক্যাডারের নির্লোভ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান ভুক্তভোগীরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সাথে এবিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ডিজি হয়েছেন মাত্র দুই মাস আগে। তাই ভুক্তভোগী কিংবা যে কেউ তদন্তে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর