ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৬ লেনের মহাসড়ক নির্মাণের দাবিসহ উন্নয়ন বঞ্চনার প্রতিবাদে বরিশাল বিভাগের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে।
রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল নগরীর চারটি স্থানে পৃথক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এসময় ৬ লেনের মহাসড়কসহ চীন সরকারের অর্থায়নে বরিশাল একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানান বক্তারা। একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বাকেরগঞ্জ উপজেলা, পটুয়াখালী জেলার বাসিন্দারা। ভোলায় ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ, গ্যাস ভিত্তিক শিল্পকারখানা, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভোলা-বরিশাল সেতু স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে স্থানীয়রা। এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সাংবাদিক পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতাসহ সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
দাবি আদায়ে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, রূপাতলী বাসটার্মিনাল, বিবিরপুকুর পাড় ও অশ্বিনী কুমার হলের সামনে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবায়েদুল হক চান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সমন্বয়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদরা।
একই দাবিতে রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে স্থানীয়রা। এসময় বাকেরগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি দানিসুর রহমান লিমনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, উপজেলা ছাত্রশিক্ষক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ফজলুর রহমান মোল্লা, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুজিবর রহমান মোল্লা, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, প্রভাষক ইন্দ্রজিৎ কুমার, সাবেক যুবনেতা মোজাম্মেল সিকদার, সাবেক ছাত্রনেতা খান সুলতান মাহমুদ জলিল।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। এরপর দাবি আদায়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া রোববার বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও স্মারকলিপি দিয়েছে স্থানীয়রা। এসময় ভোলার গ্যাসে স্থানীয়দের ঘরে ঘরে সংযোগ দেওয়া, গ্যাস ভিত্তিক শিল্পকারখানা, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভোলা-বরিশাল সেতু স্থাপনসহ নানা দাবি জানান হয়। রোববার দুপুরে আগামীর ভোলার আয়োজনে ভোলার বাংলাস্কুল মাঠে এ কর্মসূচি হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। এসময় আগামীর ভোলার মুখপাত্র মীর মোহাম্মদ জসিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, ভোলা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসুল আলম, জামায়াতে ইসলামীর ভোলা পৌর আমির জামাল উদ্দিন, জাতীয় পার্টির সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, ইসলামী আন্দোলনের জেলা (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম তারেক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাহিম ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা প্রতিনিধি ইয়াছিন আরাফাত প্রমুখ।
বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনের কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ভাঙ্গা হতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত ২ লেনের সংকীর্ণ রাস্তা থাকার কারণে এই সড়কে প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে জানমালের ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে। এই মহাসড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ব্যক্তিগত গাড়িতে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। মহাসড়কটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় ব্যাপক যানজটের কারণে ভাঙ্গা হতে বরিশাল আসতে অত্যধিক সময় ব্যয় হচ্ছে। এ কারণে পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনেও ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া চীন সরকার বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করবে। সেই হাসপাতালগুলোর একটি বরিশাল বিভাগের নির্মাণের জোর দাবি জানান বক্তারা।
ভোলার কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ভোলায় প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে। কিন্তু ভোলা আজও কোনো গ্যাস ভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেনি। এমনকি ভোলার ঘরে ঘরেও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভোলার গ্যাস ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে এখন ভোলার থেকে কোনো গ্যাস বাইরে নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ, গ্যাস ভিত্তিক শিল্পকারখানা, সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবি পূরণ না করা হবে। দাবি আদায়ে দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে আগামী ২৭ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ করা হবে। এরপর সচিবালয় ঘেরাও, ভোলায় হরতাল ও কর আদায় বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
প্রতিনিধি/এসএস
