মঙ্গল ও রোগব্যাধী থেকে মুক্তি লাভের বিশ্বাসে প্রায় দুইশ বছর ধরে নাটোরের শংকরভাগ গ্রামে চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দিনব্যাপী এ চড়ক মেলায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সমাগমে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এ মেলা।
বিজ্ঞাপন
মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েক গ্রাম জুড়ে চলছে এ উৎসবের আমেজ। বাড়িতে বাড়িতে চলে মাংস, বিরানি, পিঠা, পায়েস, সেমাইসহ নানান পদের খাবারের আয়োজন।
মানুষের পিঠের সঙ্গে কালা বা বর্শি বিধিয়ে ঘোরানোই এ মেলার ঐতিহ্য। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বাসনা পূর্ণ করতে নানা রকম ফল, হাঁস-মুরগি ও ছাগল মানত করে পূজা অর্চনা করে। সকাল থেকে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। দূর-দূরান্ত থেকে আসতে থাকেন দর্শনার্থীরা। নানা ধর্মের মানুষের পদচারণায় মেলা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
পাবনা থেকে মেলায় ঘুরতে আসা রুপক কুমার বলেন, প্রতিবছর এ চড়ক মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় অনেক মানুষ আসে। পহেলা বৈশাখে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষের পিঠের সঙ্গে কালা বা বর্শি বিধিয়ে ঘোরানো। কৌতুহলে অনেক মানুষ আসে মেলা দেখতে।
স্থানীয় বাসিন্দা কমর দাস বলেন, হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের আয়োজনে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অনেকে মানত করে নানা কিছু নিয়ে আসেন। বাঙালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছরই এ চড়ক পূজায় মেলা বসে। অনেক দূরের মানুষ এ মেলায় ঘুরতে আসেন।
বিজ্ঞাপন
রতন প্রমানিক নামে একজন বলেন, এলাকার প্রায় দেড়শ ঘর আদিবাসী ছাড়াও আশপাশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চৈত্র মাসের শেষ দিনে এক এ চড়ক মেলার আয়োজন করেন। মেলাকে কেন্দ্র করে নানা খাবারের দোকানের পসরা বসে। জামাই-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে বাড়িতে দাওয়াতে আসেন। এতে আনন্দময় এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
পাবনা থেকে মানত করে আসা বিথী রানী বলেন, আমার ৩ বছরের সন্তান অনেক অসুস্থ। অনেক চিকিৎসা করিয়েও কোনো সুফল পাইনি। তাই এ চড়ক মেলায় সন্তানের জন্য মানত করতে এসেছি। অনেকে রোগমুক্ত হয়েছেন। অনেক বাচ্চা হয় না, এখানে মানতের পর তাদের বাচ্চা হয়েছে।
শংকরভাগ চড়ক পূঁজা উদযাপন কমিটির সভাপতি হারান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, দুইশ বছর থেকে আমাদের বাপ-দাদারা এ চড়ক মেলার আয়োজন করেছে। এরই ধারাবারিকতায় এ বছরেও তা হচ্ছে। অনেক জেলা থেকে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এ বছরও এসেছেন। অনেকে মানত করেন। এখানে ২১ সদস্য বিশিষ্ট মেলা পরিচালনার কমিটি রয়েছে। মেলায় যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলার সদস্যরা তৎপর আছেন।
আরও পড়ুন
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখতার জাহার সাথী ঢাকা মেইলকে বলেন, চড়ক নিয়ে অনেক বই-পুস্তকে পড়েছি। কখনো সরাসরি উপভোগের সুযোগ হয়ে উঠেনি। গ্রাম বাংলার এ মেলা আগের মতো আর তেমন অনুষ্ঠিত হয় না, প্রায় বিলুপ্তের পথে। নাটোরের শংকরভাগ চড়ক মেলায় গিয়ে তা উপভোগ করেছি। অনেক বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী মেলা এটি। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের আয়োজনে মেলাটি হয়ে থাকে। মেলায় পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্ঠিয়া থেকে অনেক মানুষেরর সমাগম ঘটে। মেলায় যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, চড়কে ঘুরতে গিয়ে যেন হতাহতের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য কর্তৃপক্ষ একজন করে ঘুরিয়েছে। মেলাটি কর্তৃপক্ষ সুন্দরভাবে পরিচালনা করেছে। এবং আগামী বছরে মেলায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশি ক্যাম্প বসানো হবে। সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
প্রতিনিধি/টিবি