রাজশাহীর বাঘায় নিজেদের শরীরে লোহার বড়শি ফুটিয়ে খোলা মাঠে ‘চড়ক’ গাছে ঘুরপাক খেয়ে নেচে-গেয়ে পালন করা হয়েছে ‘চড়ক উৎসব’।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার আড়পাড়া শ্রীরামপাড়া মাঠে এ উৎসব পালন করা হয়। শিব পূঁজাকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা নিজেদের শরীরে লোহার বড়শি ফুটিয়ে এ উৎসব পালন করে। এ সময় পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্য সেবন করে তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন থানার ওসি (তদন্ত)।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে গিয়ে ব্যতিক্রমী বিভিন্ন দৃশ্য চোখে পড়ে। পূঁজার ঘরে খালি গায়ে মূল সন্ন্যাসিকে মাটিতে শোয়ানোর পর ৪ জন মানুষ দুই হাত দুই পা চেপে ধরে আঙ্গুলের মতো মোটা লম্বা দুটি লোহার বড়শি মেরুদণ্ডের দুই পাশে ফুটিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে রক্ত। এরপর বড়শিতে নতুন একটি গামছা বেঁধে সন্ন্যাসীকে শূন্যে তুলে ধরে চড়ক গাছের ৩০ ফুট ওপরে ঝুলিয়ে একে একে সাত পাক ঘুরানো হয়। এরপর অন্য সঙ্গীরা মাটিতে নামিয়ে বড়শি খুলে দেয়। এভাবেই হাতে দড়ি নিয়ে বড়শিবিদ্ধ শরীর নিয়ে ‘চড়ক’ গাছে ঘুরপাক খায় মূল সন্ন্যাসী। এর একদিকে থাকে বড়শিবিদ্ধ বিহীন আরেকজন মানুষ। সোমবার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই ঘুরানো হয় ৪ জনকে। এ সময় উৎসবে মেতে ওঠা অনেকেই নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্য পান শুরু করে।
আয়োজকরা বলেন, শিব ভক্ত বান রাজা তার সঙ্গীদের নিয়ে শিবকে পাওয়ার জন্য প্রার্থনায় মত্ত হয়ে নিজের শরীর থেকে রক্ত বের করে তা শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে। এতে শিব খুশি হয়। এ কারণে শিবকে খুশি করার জন্য শরীরের রক্ত ঝরিয়ে খোলা মাঠে ‘চড়ক’ উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। নিজেদের মঙ্গল কামনায় বংশ পরম্পরায় আমরা এটি পালন করে আসছি।
তারা বলেন, চড়ক ঘোরা কোনো কষ্টের বিষয় নয়। ভগবান আমাদের সঙ্গে থাকলে ব্যাথা লাগবে কেন? তবে বড়শি বিদ্ধের যন্ত্রনা মানুষ সহ্য করলেও অভিভাবকরা সন্তানের সে যন্ত্রনা ভোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে নাটোরের লালপুরের অরবৃন্দ ঠাকুর ঢাকা মেইলকে বলেন, আদিবাসীদের ধর্ম বিশ্বাসে ছেলেমেয়েদের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আদিবাসীরা শিব পূঁজার ধর্মীয় আচরণের মাধ্যমে চড়ক উৎসব পালন করে থাকেন। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আদিবাসী সাঁওতাল, ওরাঁও, মাহাতো, তাদের নিজ নিজ রীতিতে প্রতি বছর এ উৎসবে মেতে ওঠেন। যারা পূজায় অংশগ্রহণ করেন, তাদের আমিষ খাবার, হলুদ, তেল ও সব রকম মসলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সমাজ প্রধান রুপকুমার ঢাকা মেইলকে বলেন, শত শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে শিব পূঁজায় এমন আয়োজন হয়েছে। অনেকে মন বাসনা পূর্ণের জন্য মানত করেন। গল্প আছে, এখানে মানত করলে কঠিন রোগ থেকে মুক্তি মেলে।
নেশাজাতীয় মাদক সেবন সম্পর্কে তিনি বলেন, আনন্দের জন্য আমাদের এখানে তালের রস পান করা হয়। এই আয়োজনে এসব পান করতে তেমন কোনো অনুমতি লাগে না।
এ ব্যাপারে বাঘা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল রানা ঢাকা মেইলকে বলেন, এই উৎসবকে সফল করতে আমাদের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে।
চড়ক পূঁজার মেলায় গিয়েছিলেন বাঘা থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) সুপ্রভাত মন্ডল। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, মেলা ঘুরে দেখে আমি খুশি হয়েছি। এবার মেলার পরিবেশ খুবই সুন্দর ছিল।
তবে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, এসব ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।
প্রতিনিধি/টিবি