মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট, পাম্প-নলকূপে উঠছে না পানি

আশিকুর রহমান মিঠু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১০ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এসব এলাকার অধিকাংশ সাধারণ পাম্প ও নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে সুপেয় ও গৃহস্থালির কাজে পানির সংকটে এসব এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি বেশির ভাগ পুকুর ও জলাশয় ভরাট হওয়ায় এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পানির স্তর ৪০ থেকে ৬০ ফুটের নিচে নেমে যাওয়ায় পৌর শহরের বাসা বাড়িতে নলকূপ ও মোটর দিয়ে পানি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় পানির স্তর ৩০ থেকে ৬০ ফুটের নিচে নেমে গেছে। এতে জেলার অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন


1000117768

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় সরকারি হিসেবে ৫৪ হাজার ৬৫১টি হস্তচালিত নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই যুগে ১২ হাজার ২০৮টি নলকূপ বন্ধ হয়ে গেছে। অগভীর নলকূপ রয়েছে ১৯ হাজার ৬০০টি। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৯ হাজার ৯১০টি। অগভীর নলকূপের গভীরতা ৬০ থেকে ৭৫ মিটার।

সদর উপজেলায় এলাকাভেদে পানির স্থিতিতল সর্বনিম্ন ৩৫ দশমিক ৩৬ ফুট (১০ দশমিক ৭৮ মিটার) থেকে সর্বোচ্চ ৪৪ দশমিক ৯৮ ফুট (১৩ দশমিক ৭১ মিটার)। তবে সদর উপজেলায় সরকারিভাবে ১৫০ মিটার বা ৪৯২ ফুট গভীরতায় নিচে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। আর ব্যক্তি উদ্যোগে অগভীর নলকূপ স্থাপনে ১৮০ থেকে ২৫০ ফুট গভীরে যেতে হয়। সদরে সরকারি ২ হাজার ৪৭৩টি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৪৮৬টি নলকূপ বন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন

ট্রেনের তেল চুরির ঘটনায় চালক-পরিচালকসহ ৮ জনের নামে মামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার পানি শাখা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায় পানির গ্রাহকের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০। তাদের জন্য ৩ লাখ ৪০০ হাজার লিটার পানি দরকার। পানি উৎপাদনের ৯টি নলকূপের মধ্যে সচল আছে ৫টি, ৪টি বন্ধ। পৌর শহরের ভাদুঘর, সদর উপজেলা পরিষদ, তিতাস পাড়া ও পাইকপাড়ায় পানি শাখার পানি উৎপাদনের নলকূপ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ২ লাখ ৬০ হাজার লিটার পানি গভীর নলকূপ ব্যবহার করে ভূগর্ভ জলাধার থেকে তোলা হয়। বর্তমানে পৌর এলাকার অধিকাংশ নলকূপ ও মোটর দিয়ে পানি উঠছে না। গত এক যুগে সরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা ৬০টি নলকূপের মধ্যে মাত্র ১০টি সচল রয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত বলেন, পৌরসভায় পানির স্তর ৪০ থেকে ৬০ ফুট নিচে নেমেছে। এক যুগ আগে ১২০ থেকে ১৬০ ফুট গভীরে হস্তচালিত নলকূপ দিয়ে পানি আসত। এখন ১৮০ ফুট নিচ থেকেও পানি আসছে না। এখন পানি পেতে ২০০ থেকে ২২০ ফুট গভীরে যেতে হয়। আগে ২৯০ থেকে ৩০০ ফুট নিচ থেকে অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ৪২০ থেকে ৪৫০ ফুট নিচে যেতে হয়। তিনি বলেন, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাত্রাতিরিক্ত সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন, পুকুর ও খোলা জায়গা ভরাট, পুকুর, খাল ও নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সদরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সামিরা আক্তার বলেন, সদরে পানির স্তর নিচে নেমেছে। অনেকেই পানির সমস্যায় ভুগছেন।

সরাইল উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রূপক মিয়া বলেন, সরাইলে পানির স্তর ৩৭ ফুট নিচে নেমেছে। বর্তমানে ৫৫০ ফুট নিচে গভীর ও ১৮০ থেকে ২০০ ফুট নিচে অগভীর নলক‚প স্থাপন করা হয়। আর গভীর নলকূপ সচল ১ হাজার ৪৫৭টি এবং বন্ধ আছে ৬১টি।

1000117764

জেলা তথ্য বাতায়নের তথ্যে জানা গেছে, পুরো জেলায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৭টি খানা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪১ এবং সদর উপজেলায় ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৯৪ মানুষের বাস। পৌরসভাসহ উপজেলায় প্রায় ৭০-৮০ হাজার নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে বিশাল এই জনগোষ্ঠী সুপেয় ও গৃহস্থালির কাজে পানির সংকটে ভুগছে। শহরের কান্দিপাড়া, কাজীপাড়া, শিমরাইলকান্দি, হালদারপাড়াসহ পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকায় প্রায় এক মাস ধরে নলকূপে এক ফোঁটাও পানি ওঠে না। এসব এলাকার বাসাবাড়ির মোটর দিয়েও পানি ওঠে না। সুপেয় পানির জন্য মানুষ প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

কাজীপাড়ার বাসিন্দা আলী মিয়া বলেন, বাড়ির নলকূপসহ মোটর দিয়েও পানি উঠে না। দোকান থেকে পানি কিনে মেপে মেপে ব্যবহার করতে হচ্ছে।

শিমরাইলকান্দির বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন,  বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। খাল শুকিয়ে রয়েছে। সাধারণ মোটরে পানি উঠছে না। প্রতিদিন আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে পানি আনতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তাহমিনা পারভীন বলেন, এটি শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়, সারা দেশেরই সমস্যা। এই সময়ে পানির সংকট থাকে। পানির স্তর নিচে নেমেছে। নলকূপ ও মোটরে পানি না আসার বিষয়টি অনেকে জানিয়েছেন। প্রচণ্ড গরম, বৃষ্টি না হওয়া এবং বেশিরভাগ নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা প্রকট হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর