বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদে ঢল নেমেছে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ঈদ ও পরবর্তী মোট ৩ দিনে ২০ হাজার ৪০০ দর্শক সমাগম ঘটেছে ষাটগম্বুজ মসজিদে। গত ৩ দিনে জার্মান, ইংল্যান্ড, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ৩০ জন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন এ তালিকায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাগেরহাট যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মাদ জায়েদ জানান, এই সময়টা অন্যান্য দফতর ছুটি ভোগ করলেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আমরা ছুটি ভোগ না করে আগত দর্শনার্থীদের স্বাগত এবং সার্বিক সহায়তার জন্য সব কর্মচারী নিরলসভাবে কাজ করছেন। পাশাপাশি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ক্যাম্পাসে রয়েছে টুরিষ্ট পুলিশ।
বাগেরহাট যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মাদ জায়েদ জানান, পুরো ক্যম্পাস সারাদিন ঘুরতে প্রতিজন দর্শনার্থীর জন্য ৩০ টাকা, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর জন্য ১০ টাকা ও বিদেশি পর্যটকের জন্য ৫০০ টাকা ও সার্কভুক্ত দেশগুলোর পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা টিকিট মূল্য নির্ধারিত রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
যাদুঘরের বিভাগীয় প্রকাশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফারজান পারভিন মিতা জানান, ঈদুল ফিতরের প্রথম দিনে টিকিট সেল হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার টাকা।
খানজাহানের অমর সৃষ্টি ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ যা দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আর্কষণীয় স্থান রূপে বিবেচিত হয়েছে। ষাটগম্বুজ মসজিদকে ঘিরে বাগেরহাটে আরও কয়েকটি পর্যটনস্পট গড়ে উঠেছে। এসব দর্শনীয় স্থানে সারাবছরই কমবেশি দর্শনার্থী আসে দেশ বিদেশ থেকে। তবে বিশেষ কিছু দিনকে কেন্দ্র করে এই দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায় অনেকগুণ।
বিজ্ঞাপন
ঈদের আনন্দ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজারও মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ভিড় করছেন বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ষাটগম্বুজ মসজিদ, তৎসংলগ্ন বিশাল ঘোড়াদিঘি, ষাটগম্বুজ যাদুঘর যেখানে থরে থরে সাজানো রয়েছে মহান আউলিয়া হযরত খানজাহান আলির টাকশালের তাম্রমুদ্রা, মাটির ব্যবহৃত বাসন, তৈজসপত্র, রয়েছে খানজাহান আলী দিঘির মমিকৃত কালাপাহাড় কুমির যাদুঘরের বিশেষ আকর্ষণ বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন, মানচিত্র এবং লিপিবদ্ধ ইতিহাস। পাশেই খানজাহানের বসতভিটা খননকালে উদ্ধার করা অনেক মূল্যবান দ্রব্যাদির সমাহারে সমৃদ্ধ আজকের ষাটগম্বুজ যাদুঘর।
এর আগে পবিত্র ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে বাগেরহাটে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বরণে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট ষাটগম্বুজ মসজিদ। বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে বাগেরহাটের প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতর ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বাগেরহাট জোনের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগই কাজে লাগাচ্ছে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায়।
এ ছাড়াও খানজাহান আলীর মাজার, সদর উপজেলার হাকিমপুরে অবস্থিত ভারতের তাজমহলের আদলে করা ‘চন্দ্রমহল’ ইকো পার্ক, বারাকপুরে অবস্থিত সুন্দরবন রির্সোট সেন্টার, শহরের দশানী পার্কসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের কছে আকর্ষণীয় করতে সেজে ছিল আকর্ষণীয় রুপে।
হাকিমপুরের চন্দ্রমহলের ব্যবস্থাপক কাবুল আহম্মেদ বলেন, এ বছর ঈদে লম্বা একটা ছুটি পাওয়া গেছে। বছরের টানা এ ছুটিতে অনেক আশানুরুপ দর্শনার্থী পাওয়া গেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, রমজান শেষে গরমের তীব্রতা কম থাকার কারণে এ বছর পর্যটক সমাগম বেশি হয়েছে। প্রতি বছরই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে করমজলে দেশি-বিদেশি পর্যাটকদের ব্যাপক আগমন ঘটে। ঈদের দিন মূলত স্থানীয় লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন। ঈদের পরদিন থেকে দর্শনার্থী বা পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ঈদ উপলক্ষে করমজলকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিস জানান, ঈদে সুন্দরবনের করমজল, কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট ও দুবলারচরসহ পর্যটন স্পটগুলোতে আগমন ঘটে প্রচুর পর্যটকদের। ঈদের ছুটিতে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল, শরণখোলা রেঞ্জসহ সন্নিহিত বন লোকালয়ে ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে আগত দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা ও বন্যপ্রাণীসহ বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য পূর্ব-সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারির ঈদের ছুটি বতিল করা হয়েছিল।
বাগেরহাট জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে বাগেরহাটের পর্যটন স্পটগুলোতে প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। তাই এসময়ে আমরা বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছি। ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তার কারণে ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে পর্যটকদের ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রতিনিধি/এসএস