রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মনোবাসনা পূরণে মেলায় ভক্তদের ঢল, শতাধিক জোড়া পাঠা বলি

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

মনোবাসনা পূরণে মেলায় ভক্তদের ঢল, শতাধিক জোড়া পাঠা বলি

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হাট ভরতখালীর ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থান শ্রী শ্রী কাষ্ঠকালী মন্দিরে জমে উঠেছে ভক্তদের মনোবাসনা পূরণের মেলা। সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে মনোবাসনা পূরণের জন্য মা কাষ্ঠকালী মন্দিরে পূজা দেওয়ার উদ্দেশে ভক্তদের সমাগম ঘটছে।

প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই তীর্থস্থানে সনাতনী ভক্তদের মনোবাসনা পূরণের পূজা হয়ে থাকে। মানত পূরণের জন্য পাঠা বলি দিতে আসেন ভক্তরা। বৈশাখ মাস ছাড়াও ঈদের বন্ধে মঙ্গলবার পড়ায় দুটো পাঠা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৫৪টি ভেড়া বলি দেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে শনি ও মঙ্গলবার মাসব্যাপী মনোবাসনা পূরণের মেলা হয়ে থাকে। এতে গাইবান্ধা, দক্ষিণ বঙ্গ, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ও ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানত পূরণের জন্য পাঠা বলি দিতে আসেন ভক্তরা।

আরও পড়ুন

গারো পাহাড়ের ‘গজনী অবকাশে’ পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়

জনশ্রুতি আছে যে, আনুমান ৩০০ বছর  আগে তৎকালীন ভরতখালী কাষ্ঠকালী মন্দিরের সামনে যমুনা নদীর পানিতে একখানা কাঠ ভেসে আসে। জমিদার স্বপ্নে দেখেন এই কাঠ সংরক্ষণ করতে হবে। সেই সময় থেকে কাঠটি এই মন্দিরের মধ্যে অবস্থান করছে। ভক্তরা পাঠাবলি দেওয়াসহ নিজ সন্তান-পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনায় মায়ের গায়ে বিভিন্ন স্বর্ণালংকার উপহার দিয়ে থাকেন। প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে শনি ও মঙ্গলবার বৈশাখ মাসজুড়ে মেলা বসে। ভরতখালী কালী মন্দিরের সামনে ১ বৈশাখ থেকে মাসব্যাপী মেলা চলে। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস এসময় মন্দিরে পূজা অর্চনা ও বলি দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়।

প্রচলিত শ্রুতি কথা থেকে জানা যায়, ভরতখালী কাষ্ঠকালি মন্দির এ অঞ্চলের হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান। প্রায় ৩০০ বছর আগে এ মন্দির নির্মিত হয়েছিল। তৎকালীন জমিদার রমনী কান্ত রায় শ্রী শ্রী কাষ্ঠকালি দেবতার স্বপ্নাদেশ পান যে, আমি তো ঘাটে এসেছি, তুই আমাকে পূজা দে। জমিদার এই পোড়া কাঠের টুকরোটিকে পূজা দিলে এখান থেকেই এটি কালী মূর্তিতে রূপান্তরিত হয়। তখন থেকে নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়ে আসছে।


বিজ্ঞাপন


গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে এ মেলা বসে। পুণ্যার্থীদের পাশাপাশি মেলায় হাজারও দর্শনাথীদের ভিড় হয়। মন্দিরে ধুপ, মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে ও তেল দিয়ে তারা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। মন্দিরের চারপাশে অনেককেই পাঠা (ছাগল) নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মনোবাসনা পূরণের লক্ষ্যে প্রার্থনা শেষে মন্দিরের গুরুর (ঠাকুর) নির্দেশে ৫০ থেকে কয়েক শতাধিক জোড়া পাঠা বলি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় উপচে পড়া ভিড়

এছাড়াও প্রার্থনা শেষে অনেকেই আবার বিভিন্ন খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করছে। এ উপলক্ষে মন্দিরের পাশে পাকুর তলায় প্রায় ৭ একর এলাকাজুড়ে বসে গ্রামীণ মেলা। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ মনোবাসনা পূরণে ও ঘুরতে আসেন এখানে। মেলায় নাগর দোলা, বাহারি খাবার, বাঁশের তৈরি কুলা, ডালি, চালনা, মাটির তৈরি হাড়ি, থালা, বিভিন্ন মূর্তি, পুতুল, বাঘ, আম এবং নানা তৈজসপত্রের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা বেচাকেনা করছেন।

গাইবান্ধা ভিএইড রোড থেকে মানত পূরণে আসা শ্রাবণী সাহা বলেন, এই মন্দির একটি জাগ্রত মন্দির। সন্তান, স্বামী ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় দীর্ঘদিন ধরে মায়ের কাছে পাঠা মানত করা ছিল। সময়ের অভাবে তা পূরণ করতে আসতে পারিনি। এখন ঈদের বন্ধ থাকার সুবাদে মায়ের কাছে মানত পূরণ করতে আসলাম।

কাষ্ঠকালী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার সিনহা বলেন, এই মন্দির মনোবাসনা পূরণের মন্দির। বৈশাখ মাসের মাসব্যাপী মেলায় শনি ও মঙ্গলবার ভক্ত স্বজনের ভিড় হয়ে থাকে। কিন্তু বৈশাখ মাস ছাড়াই প্রায় কয়েক শতাধিক ভক্তদের সমাগম এবার। ধারণা করছি ঈদের বন্ধ থাকার সুযোগে তারা তাদের মানত পূরণের জন্য এখানে এসেছেন। মানত পূরণে আজ মঙ্গলবার ৫৬টি পাঠা উৎসর্গ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই মন্দিরে আমি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আশা করি, আগামী বৈশাখ মাসে আরও প্রচুর ভক্ত সমাগম হবে। এ বছর সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এই মেলা চলবে। এটা একটি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী জাগ্রত মন্দির।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর