ঈদ বা কোনো উৎসব এলেই বেড়ে যায় ভোগ্যপণ্যের দাম। তবে এবার রমজান ঘিরে ইফতারি আইটেম থেকে শুরু করে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কম ছিল। সেই সারিতে ছিল বয়লার মুরগিও। তাই ক্রেতাদের ধারণা ছিল, রমজানজুড়ে এবার অন্তত মুরগির দামে স্বস্তি থাকবে। কিন্তু সেই স্বস্তি আর স্থায়ী হলো না। শবে কদর ও ঈদকে ঘিরে আগের রূপে ফিরেছেন চট্টগ্রামের মুরগি ব্যবসায়ীরা। ১৯০ টাকা থেকে হঠাৎ মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বাড়িয়ে এখন বিক্রি করছে ২৩০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগের দিন থেকে মুরগির দাম কেজিপ্রতি আরও বাড়তে পারে। কারণ ঈদের সময় বয়লার মুরগির চাহিদা বেশি থাকে। সেই অজুহাতে খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ খামারে মুরগির কোনো সংকট নেই। সরবরাহও স্বাভাবিক।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম মহানগরের ২ নম্বর গেট কর্ণফুলী বাজারের মুরগি বিক্রেতা আবু জাফর বলেন, রমজান বা ঈদসহ নানা উৎসবে মুরগির দাম বাড়ানো খামারিদের পুরোনো অভ্যাস। এতে আমাদের করার কিছুই নেই। আমরা বাড়তি দামেই মুরগি কিনে এনেছি। যখন যে দামে কিনতে হয় আমরা সেই দামেই মুরগি বিক্রি করি।
নগরীর বহদ্দারহাটে খোরশেদ আলম শামীম নামে এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, শবে কদর ও ঈদের সময় মুরগির চাহিদা বাড়তি থাকে। সেই চাহিদাকে পুঁজি করে দফায় দফায় মুরগির দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে বাজারে প্রতিদিনই মুরগির দাম ওঠানামা করছে। আর কয়েকদিন পর ঈদ। ঈদের আগের দিন হয়তো মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) চট্টগ্রাম মগানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বয়লার মুরগি ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে বুধবার পর্যন্ত বয়লার মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রয় হয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। যা আগে ছিল ৩০০ টাকা কেজি দরে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানের আগে প্রতিকেজি বয়লার মুরগির দাম ছিল ১৮০ টাকা করে। রমজানের প্রথম সপ্তাহে সেটি পাঁচ টাকা বেড়ে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। এরপরের সপ্তাহে আরও পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১৯০ টাকায়। তবে গত সপ্তাহের প্রথম দিন শনিবার (২২ মার্চ) থেকে বেড়েছে মুরগির দাম। যা প্রতিকেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকায় বিক্রি করা হয়। মাঝে একদিন এ মুরগির দাম ১০ টাকা কমলেও ফের শবে কদর এবং ঈদকে সামনে রেখে মুরগির দাম গিয়ে ঠেকে ২৩০ টাকায়। ফলে মুরগি খাওয়া নিয়ে চিন্তা বাড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
বিজ্ঞাপন
নগরীর ঝাউতলা বাজারে কামাল উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, গত বুধবার মুরগি নিয়েছিলাম ১৯০ টাকা কেজি দরে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সেই মুরগির দাম ৪০ টাকা বেড়েছে। শুক্রবারও মুরগি কিনতে হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি দরে। দোকানিরা জানিয়েছেন এক টাকাও কম রাখতে পারবেন না।
আশরাফ চৌধুরী নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে বর্তমানে গরুর মাংস হাড়সহ ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। হাড় ছাড়া ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা। এ কারণে গরুর মাংস খাওয়া আমাদের জন্য এখন দুঃস্বপ্ন। খাওয়ার মতো ছিল বয়লার মুরগি। সেটারও এখন দাম বাড়ছে হু হু করে। এ অবস্থায় মুরগি খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে। যদি তাই হয়, তা হলে আমরা খাব কি?
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, সামনে ঈদ। আর ঈদে মুরগির চাহিদা একটু বেশি থাকে। সেই চাহিদাকে পুঁজি করেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা তো কোনো একটা অজুহাতের অপেক্ষায় থাকে। সেই অজুহাত দেখিয়েই দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করে। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি, খামারে যথেষ্ট পরিমাণ মুরগি রয়েছে। সাপ্লাইয়ে কোনো ধরনের সংকট নেই। এরপরও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা মুরগির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা নগরীর দামপাড়াসহ কয়েকটি বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। মুরগির বাড়তি দামের বিষয়টি দেখছি।
কেআই/এফএ