সড়কপথে জমে উঠেছে ঈদযাত্রা। আর এই যাত্রাকে পুঁজি করে বাস কাউন্টারগুলোতে শুরু হয়ে গেছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। বিষয়টি অস্বীকার করেনি বাস মালিক ও কাউন্টার কর্মীরাও। তবে তাদের মুখে বরাবরের মতো সেই পুরোনো অজুহাত।
বাস মালিক ও কাউন্টারকর্মীরা বলছেন, যাত্রীরা ঘরমুখো। ফেরার পথে যাত্রী কম। তাই কিছুটা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন তারা। তবে যত অজুহাতই তুলুক না কেন, এ বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি নন বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বিজ্ঞাপন
ইতোমধ্যে ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগরীর সাগরিকা, অলংকার, কর্নেলহাট ও এ কে খানে অভিযান পরিচালনা করে তিন বাস কাউন্টারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম-১১ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাকারিয়া।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাকারিয়া। তিনি জানান, কোনো অজুহাতে যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই। তাই তাৎক্ষণিক অভিযানে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত তিনটি বাস কাউন্টারের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে শাহী ও জোনাকি পরিবহনসহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবহন থেকে অতিরিক্ত আদায়কৃত ভাড়া যাত্রীদের মাঝে ফেরত দেওয়া হয়।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সিএমপি ট্রাফিক বিভাগের এডিসি (উত্তর) মো. নাজিম উদ্দিন, বিআরটিএ চট্টগ্রাম জেলা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) রায়হানা আক্তার উর্থি, চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. খোরশেদ আলম।
অভিযানের পরেও দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের অলংকার মোড়, এ কে খান ও দামপাড়া বাস কাউন্টারে নির্ধাারিত ভাড়ার চেয়েও ৫০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, বরিশালের টিকিট পেতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। সাথে রয়েছে টিকিট কাটার ভোগান্তিও। এর অন্যতম কারণ প্রতিটি কাউন্টারে থাকা লোকজন। যারা কমিশনভিত্তিক নিযুক্ত রয়েছে। তারা মানুষ দেখলেই ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছেন। দ্রুত টিকিট কাটিয়ে বাসে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রতিটি কাউন্টারে এমন ৪০ থেকে ৫০ জন লোক সক্রিয় রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাড়তি ভাড়ার কারণে বাসের টিকিট কাটতে না পেরে শাহরিয়ার অপু নামের একজন বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই চট্টগ্রামে থাকি, কাজ করি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি (রংপুর) যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন ১২০০ টাকার টিকিট ১৭০০ টাকা চাচ্ছে। এ কারণে এখন ভাবছি, যাব কিনা।
চিলাহাটির টিকিট কাটা যাত্রী মইনুল হাসান বলেন, আমাদের ঈদের ছুটি ছাড়া বাড়ি যাওয়ার আর সুযোগ নেই। তাই বাড়তি ভাড়াতেই স্ত্রী আর ছেলেদের পাঠিয়ে দিলাম। ঈদের দিন আসতে আসতে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় এই মুহূর্তে আমি যেতে পারছি না। আবার এরা অগ্রিম টিকিট দিচ্ছে না।
শান্ত পরিবহনের টিকিট বিক্রয়কর্মী জরিপ আলী বলেন, আমরা কোনো বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি না। যে ভাড়া নেওয়ার সেটাই নেওয়া হচ্ছে। আর গাড়ি আসার ওপর আমরা টিকিট বিক্রি করছি। গাড়ি আসতে দেরিও হতে পারে। তাই ঈদে কোনো অগ্রিম টিকিট কাটার ব্যবস্থা করা হয়নি।
উত্তরবঙ্গের পরিবহন তোয়াজ এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী শরীফুল বলেন, অ্যাডভান্স টিকিট নাই। আজকের টিকিট আজকে নিতে হবে। নিলে নিবেন, না হয় আগামীকাল (২৫ মার্চ) থেকে রংপুরের ভাড়া দুই হাজার টাকা হবে।
ভাড়া বাড়বে কেনো জানতে চাইলে বিক্রয় কর্মী শরীফুল বলেন, ভাড়া আমরা বাড়াতে পারি না। কমাতেও পারি না। আমরা এখানে শুধু চাকরি করি। মালিকের কথামতো চলতে হয় আমাদের। তারা ভাড়া বাড়াতে বললে বাড়াতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভাড়া চার্ট অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসেছি। যাওয়ার সময় ভর্তি করা যাত্রী নিয়ে গেলেও ফিরে আসার সময় খালি আসতে হয়। তাই আমরা ভাড়ার টাকার সঙ্গে ৫০ টাকা বাড়তি নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাব দিলেও সেটি কেউ অনুমোদন করেনি। তবে মৌন সম্মতি দিয়েছেন।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহমুদা বেগম বলেন, প্রতিবছরই এ ধরনের সমস্যা হয়। এবার যেন এমন কিছু না হয়, সেজন্য আমরা বাস মালিকদের সঙ্গে বসেছি। কোথাও যদি কোনো অনিয়মের তথ্য পাই, আমরা অবশ্যই সেখানে যাব। ঈদযাত্রায় জনসাধারণের যেন কোনো ভোগান্তি না হয়, সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি আছে।
অন্যদিকে ঈদযাত্রা নিরাপদ করার আহ্বান জানিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সাজিব বলেন, ঈদযাত্রায় কোনো ভোগান্তি যাতে না হয়, এ লক্ষ্যে প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন কোনোভাবেই রাস্তায় উঠতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আর মহাসড়কে অতিরিক্ত গতির গাড়ি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমরা চাই, কারও অবহেলায় কোনো পরিবারের ঈদের খুশি যেন ম্লান না হয়।
আইকে/এফএ