বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

অর্কিড-কাঞ্চন শোভা ছড়াচ্ছে রাবির পথে-প্রান্তরে

তানভীর খান তরুণ, রাবি
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ধূসর পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বেগুনি-গোলাপি রঙের কাঞ্চন ফুল। একটি-দুটি নয়, শত শত গাছে ফুটে থাকা কাঞ্চনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসজুড়ে। ক্যাম্পাসের রাস্তাঘাট, হলের পুকুরপাড়, শহীদ মিনার, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের আশপাশ—সব জায়গায় কাঞ্চনের উপস্থিতি প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরও দৃষ্টিনন্দন। সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও হাঁপানি, ক্ষত এবং পেটের পীড়ায় গাছটির বিভিন্ন অংশ বেশ উপকারী।

রক্ত কাঞ্চন, দেব কাঞ্চন এবং শ্বেত কাঞ্চনসহ বহুল প্রচলিত প্রজাতিগুলোর পাশাপাশি পাঁচ বছর আগে থেকেই ক্যাম্পাসে বিরল প্রজাতির অর্কিড কাঞ্চন গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরো ক্যাম্পাসকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। কৃষি অনুষদের এ অধ্যাপক ব্যক্তি উদ্যোগে প্রথমে মাত্র একটি গাছ থেকে চারা তৈরির উদ্যোগ নেন এবং পরে তা বৃহৎ পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে দেন।


বিজ্ঞাপন


received_2645046372352741

অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি কাঞ্চন গাছ আমাদের পিয়ন শহর থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। সেখানে দু’টি গাছ জন্ম নেয় এবং পরপর তিন বছর ফুল দেয়। এ গাছের ফুল এতই সুন্দর যে যে-ই দেখত, তাকিয়ে থাকত। এ কাঞ্চনের নাম অর্কিড কাঞ্চন। এটি লিগুমিনোসি (Leguminosae) পরিবারের উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম বাউহিনিয়া ব্ল্যাকিয়ানা (Bauhinia blakeana)। এ গাছের উৎপত্তি চীনে। সাধারণত বসন্তকালে ফুল দেয় এবং ফুলগুলো মাসব্যাপী থাকে। ফুল আসার আগে এর পাতাগুলো বেশির ভাগ সময় ঝরে যায়।

তিনি আরও বলেন, প্রথম নজরে আসার পর প্রশাসন ফুলটির সৌন্দর্য লক্ষ করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের অধীনে আমি ব্যক্তিগতভাবে বীজ সংগ্রহ করি এবং ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর দেলওয়ার হোসেন স্যারের সহযোগিতায় পাঁচ শতাধিক চারা তৈরি করি। এ ফুলের সৌন্দর্য অন্যান্য ফুলের তুলনায় অনেক আকর্ষণীয়, এর গাছে প্রচুর ফুল আসে এবং রয়েছে ওষধি গুণও।

received_9640550539298507


বিজ্ঞাপন


অর্কিড কাঞ্চন বাংলাদেশে অভিযোজিত একটি নতুন উদ্ভিদ। গাছটির উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার পর্যন্ত হয়। এর ফুলের প্রস্ফুটনকাল নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। বিরল প্রজাতির রক্তকাঞ্চন ফুলপ্রেমী সবার কাছে একটি পরিচিত নাম। দেবকাঞ্চন, শ্বেতকাঞ্চন ও রক্তকাঞ্চন—এ ফুলের উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলো। তবে কাঞ্চনের মধ্যে রক্ত কাঞ্চনই শীর্ষে স্থান পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তো বটেই, এ কাঞ্চনের সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন দর্শনার্থীরাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিদ আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে প্রায় প্রত্যেক ঋতুতেই কিছু না কিছু ফুল আমাদের মুগ্ধ করে। গ্রীষ্মে রক্ত কাঞ্চন ফুলের আকর্ষণীয় রং আর পাপড়ির নমনীয়তা অসম্ভব সুন্দর লাগে। ক্যাম্পাসে এসে রক্ত কাঞ্চন আভায় বিমোহিত হই।’

ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী জানান, রোকেয়া হলের পাশের কাঞ্চনের বাগানটি অপূর্ব সুন্দর। এটি দেখলে সবার মনে এক ধরনের ভিন্নরকম ভালোলাগা কাজ করে। রং আর রূপের অপূর্ব সমন্বয়ে বর্ণিল এই ফুল যেন প্রকৃতিকে সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে ইবি ছাত্রদলের গণ-ইফতার

অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে সড়কের ধারে সারি সারি অর্কিড কাঞ্চনের চারা গাছ লাগানো হচ্ছে। এপ্রিল থেকে মালিরা বীজ সংগ্রহ করেন এবং এক মাসের মধ্যেই সেগুলো বপন ও পরিচর্যা শুরু করেন। বর্ষাকালে গাছগুলো নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করলে দুই বছরের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। তবে রং, শোভা ও সৌন্দর্যের কারণে রক্ত কাঞ্চনই সৌন্দর্য প্রেমীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

বাগানের মালি আলতাফ হোসেন জানান, মার্চের মাঝামাঝি বা শেষে কাঞ্চনের বীজ সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে পলিথিন ব্যাগে রোপণ করা হয়। পরে এপ্রিল-মে মাসের দিকে চারা উঠিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ লাগানো হয়েছে।

এ গাছ লাগানোর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। তার মতে, সারাদেশে অর্কিড কাঞ্চনের এত বড় সংগ্রহ আর কোথাও নেই। সাবেক এ উপ-উপাচার্য বলেন, এগ্রিকালচার বিল্ডিংয়ের সামনে একসময় রক্ত কাঞ্চনের একটি গাছ ছিল, যেটিতে মার্চের শুরুর দিকে এত ফুল ফুটত যে সেখানে কোনো পাতা থাকত না। তখনই মাথায় আসে ক্যাম্পাসজুড়ে গাছটি ছড়িয়ে দেয়ার ভাবনা। তখন অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের সহায়তায় রোকেয়া হলের সামনের পুকুরপাড়সহ প্রশাসন ভবনের সামনে ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গাছটি রোপণ করা হয়, যা অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর