দীর্ঘদিন ধরে চলছে জয়পুরহাট স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও ঠিকাদারের গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে আজও শেষ হয়নি কাজ। এ কারণে প্রায় ৮ মাস ধরে সব ধরনের খেলাধুলা ও অনুশীলন বন্ধ রয়েছে এ স্টেডিয়ামে। এতে খেলাধুলাসহ অনুশীলন করতে না পেরে খেলোয়াড়দের বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে অন্য ছোট মাঠে। ঠিকমতো অনুশীলন করতে না পারায় বিপাকে তারা। স্টেডিয়ামের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি খেলোয়াড় ও ক্রীড়া প্রেমীদের। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে জয়পুরহাট শহরের রুপনগর এলাকায় ৪ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয় জয়পুরহাট জেলা স্টেডিয়াম। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে স্টেডিয়ামের মাঠ, প্যাভিলিয়ন, স্বল্প আসনের গ্যালারি সংস্কার কাজের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। আর এ কাজের দায়িত্ব পান ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাফসা ট্রেড অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল। ৪ মাসেই সংস্কার কাজ করে মাঠসহ স্টেডিয়ামটি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদারের। কিন্তু প্রায় ৮ মাসে এখনও কাজ শেষ না হওয়ায় মাঠটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিন থেকে মাঠের সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় খেলোয়াড়দের অন্য ছোট মাঠে গিয়ে অনুশীলন বা খেলাধুলা করতে হচ্ছে। এতে করে নানা সমস্যায় খেলোয়াড়রা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে খেলাধুলায়। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছিল, নিম্নমানের মাটি দিয়ে মাঠের সংস্কার কাজ করছে ঠিকাদার। পরে প্রশাসনের বাধায় নিম্নমানের মাটি অপসারণ করা হয়।
বর্তমান ও প্রাক্তন খেলোয়াড়রা বলছেন, এক সময় এখান থেকেই অনেক কৃতি খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখলেও মাঠের অভাবে এখন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে জেলার একমাত্র এ ক্রীড়াঙ্গন। তাই এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।
আক্কেলপুর উপজেলার শান্তা এলাকার নারী ক্রিকেটার সান্ত্বনা আক্তার বলেন, আমি অনূর্ধ্ব ১৮ ডিভিশন দলে খেলব। এজন্য আমার নিয়মিত অনুশীলন দরকার। কিন্তু জয়পুরহাট স্টেডিয়ামটি ৭/৮ মাস ধরে বন্ধ আছে। এ কারণে সেখানে অনুশীলন করতে পারছি না। একদিন সুগারমিল মাঠ, একদিন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি মাঠে অনুশীলন করছি। এসব মাঠে পিচ, ওয়াশরুম বা ড্রেসিং রুম নেই। এ কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।
কারাতে খেলোয়াড় নাজমুল হোসেন বলেন, আমি স্টেডিয়াম মাঠে নিয়মিত কারাতে অনুশীলন করতাম। বর্তমানে মাঠ সংস্কার কাজ চলমান থাকায় চিনিকল মাঠে এসে অনুশীলন করছি। গত ডিসেম্বর মাঠে একটি টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু স্টেডিয়াম বন্ধ থাকার কারণে সেটাও হয়নি। এছাড়া মাঠ না থাকায় নিয়মিত অনুশীলন করতে পারছি না। তাই দ্রুত স্টেডিয়ামটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
তাজুর মোড় এলাকার খেলোয়াড় অনির্বাণ কুমার বলেন, আমরা জয়পুরহাট স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলাধুলা করতাম। কিন্তু মাঠটি এখন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এ কারণে আমাদের খেলাধুলা তেমন আর হচ্ছে না। এতে করে অনেকেই খেলা থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।
প্রাক্তন খেলোয়াড় তাজ চৌধুরী বলেন, স্টেডিয়াম মাঠটি উন্নয়নের নাম করে ৭/৮ মাস ধরে তছনছ করে রাখা হয়েছে। কবে মাঠ বুঝে পাব সেটাও জানি না। এইভাবে যদি ক্রীড়াঙ্গন বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে দেশের সার্বিক ব্যবস্থায় এবং আমাদের চিন্তা চেতনায় অনেক পিছিয়ে যাব। এজন্য মাঠটি দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছি।
আরেক প্রাক্তন খেলোয়াড় আব্দুল ওয়াহাব বলেন, মাঠ সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার কাজ করতে গড়িমসি করছে। যেই মাটি দিয়ে মাঠ সংস্কার করার কথা তার চেয়ে অনেক নিম্নমানের মাটি এখানে ফেলা হয়েছিল। এ ধরনের মাটি ব্যবহার করলে মাঠের স্থায়িত্ব বেশিদিন হবে না। মাঠটি যেন সঠিকভাবে সংস্কার করা হয় এটাই আমাদের দাবি।
![]()
কারাতে কোচ শাহজাহান আলী দেওয়ান বলেন, ২০২৪ সালের জুন মাসে বলা হয় স্টেডিয়াম সংস্কার হবে, এজন্য অন্য মাঠে অনুশীলন করতে হবে। ৩/৪ মাসের মধ্যে মাঠ সংস্কার হবে বলে জানায়। আমরা প্রথমে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি মাঠে, এরপর সুগারমিল মাঠে অনুশীলন করছি। আত্মরক্ষার জন্য অনেক মেয়ে কারাতে শিখে। কিন্তু বর্তমান খোলা মাঠের কারণে ভালো পরিবেশ না থাকায় তাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই অনুশীলনে আসেন না। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যেসব নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হতো, তারাও আর আসছে না। কিছুদিন আগেও আমরা যুব গেমস থেকে ফলাফল এনেছি। বিভিন্ন জায়গায় টুর্নামেন্ট হচ্ছে সেই প্রস্তুতিও নিতে পারছি না। দুঃখের বিষয় এ অবস্থা যদি বেশিদিন চলতে থাকে, তাহলে খেলার মান অনিশ্চিত, ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে না।
জয়পুরহাট ক্রীড়া সংস্থার অফিস সহকারী শামসুল হক বলেন, মাঠ সংস্কার কাজ চলমান থাকায় বর্তমান খেলাধুলা সম্ভব হচ্ছে না। মাঠটি পূর্ণাঙ্গ চালু করতে আরও ২/৩ মাস সময় লাগতে পারে। মাঠে ঘাস না হওয়া পর্যন্ত খেলাধুলা চালাতে পারব না। কয়েকদিন আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে দু’জন ইঞ্জিনিয়ার আসছিল, তারা ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আর সময় দিয়েছেন ২০ দিন। ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করে আবার কিছু দিন বন্ধ রাখে, এজন্য এই কাজটা করতে দেরি হয়েছে।
ঠিকাদার টুটুল হোসেন বলেন, কাজটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময়মতো মাটি না পাওয়ার কারণে কাজের একটু ধীরগতি হয়েছে। মাটির একটু সমস্যা ছিল সেটা ঠিক করে দিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই মাঠ খেলার উপযোগী হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিপুল কুমার বলেন, সংস্কার কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয়, এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সংস্কার কাজ চলায় খেলাধুলা আমাদের বর্তমান সার্কিট হাউজ মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, যে দ্রুত কাজ শেষ করবেন। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে খেলার সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে।
প্রতিনিধি/এসএস

