মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রাস্তার কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়ে আত্মগোপনে ঠিকাদার, ভোগান্তি চরমে

অহিদুজ্জামান, পিরোজপুর
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

রাস্তার কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়ে আত্মগোপনে ঠিকাদার, ভোগান্তি চরমে

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার নাজিরপুর-বৈঠাকাটা-বানারিপাড়া সড়কের ১৭ কিলোমিটার রাস্তার কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়ে আত্মগোপনে ঠিকাদার। রাস্তার বিভিন্ন জায়গার পিচ ও পাথর উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। ফলে সড়কটি প্রায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায়ই ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ সড়ক ব্যবহারকারী পাঁচ ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ।

thumbnail_IMG_20250218_120036


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুরে নাজিরপুর-বৈঠাকাটা-বানারিপাড়া সড়কের পিরোজপুর অংশের সাড়ে ১৬ কিলোমিটার সড়ক ছিল সড়ক ও জনপদ (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) যৌথ দায়িত্বাধীন। ২০১৫ সালের এক পত্রে নাজিরপুর-বৈঠাকাটা-বানারিপাড়া সাড়ে ১৬ কিলোমিটার সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালে আরেকটি পত্রের মাধ্যমে এলজিইডির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দুই দফতর ভিন্ন ভিন্ন চিঠিতে মালিকানা প্রদান করায় সৃষ্টি হয়েছিল দাফতরিক জটিলতা। ফলে সড়কটি নির্মাণে কোনো দফতরই ঝুঁকি নিচ্ছিল না। তবে দাফতরিক জটিলতা নিরসন করে গত বছরে সড়কটির মালিকানা পায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।

thumbnail_IMG_20250218_120248

এরপর প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণের জন্য কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। ২০২৪ সালের জুন মাসে কাজ শুরু এবং ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে ৪টি ধাপে কাজটি শেষ করার কথা। তবে এখনও শুরু হয়নি রাস্তা নির্মাণের কাজ। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি পুনর্নির্মাণ বা মেরামত না হওয়ায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে এসব এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য।

আরও পড়ুন

সড়কে আলু ফেলে কোল্ড স্টোরের ভাড়া কমানোর দাবিতে চাষিদের বিক্ষোভ

জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড মালিক সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজের ভাই ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। সড়কের বেশিরভাগ জায়গায় পিচ-খোয়া উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট, বড় গর্তের। বৃষ্টিতে পানি জমা এবং শুকনো মৌসুমে ধুলায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায় স্থানীয় মানুষের। বৈঠাকাটা ভাসমান বাজার থেকে উপজেলা সদরে প্রতিনিয়ত ছোট বড় শত শত গাড়ি এবং কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। নাজিরপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের জনগণের নাজিরপুর সদরে আসার রাস্তা এটি। রাস্তাটি নদীর পাশ দিয়ে মালবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে কোথাও কোথাও রাস্তা নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল যে, প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে এখানকার মানুষ। জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স বা অন্যান্য গাড়ি পাওয়া নিয়েও তৈরি হয় শঙ্কা।

thumbnail_IMG_20250218_120327

দীর্ঘদিন থেকে বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, এই সড়ক বেহাল অনেক দিন ধরেই। সড়কের কোথাও খানাখন্দ আবার কোথাও ঢিবির মতো উঁচু-নিচু। সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে ট্রাক পাওয়া যায় না। ট্রাকচালকরা এ রাস্তায় আসতে চায় না। ট্রাক আনতে হলে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়।

স্থানীয়রা বলেন, রাস্তাটি ১৫ বছর ধরে কাজ হয় না। ৫ বছর ধরে খুবই বেহাল দশায় আছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। এ পথ দিয়ে এখন আর যাতায়াত করার কোনো অবস্থা নেই। মানুষ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সও এ রাস্তায় ঢুকতে চায় না। আমরা খুব কষ্টে দিন পার করছি। রাস্তার পাশের বাড়ি-ঘর ধুলায় লাল হয়ে আছে।

thumbnail_IMG_20250218_120348

পিরোজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকেও যুগ্ম সচিব রাস্তাটি পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। আশা করছি খুব দ্রুতই রাস্তাটি মেরামতের কাজ শুরু হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর