শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

মা এখন পঙ্গু হয়ে গেছেন, তাই ভাঙা-চোরা ঘরেই থাকেন

নাঈম ইসলাম
প্রকাশিত: ০৬ জুন ২০২২, ০২:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ছবি : ঢাকা মেইল

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোছা. মনোয়ারা বেগম ওরফে বানেছা বেগম। বয়স ৭০ বছর। ১৯৬৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হাফিজ উদ্দিন ওরফে বাসু মিয়ার (মৃত) সঙ্গে। বিয়ের আট বছর পার না হতেই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান হাফিজ। স্বামীর মৃত্যুর পরে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।

মনোয়ারা জানান, দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দ্বিতীয়বার আর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি তিনি। অভাবের সংসার চালাতে গিয়ে কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন, আবার কখনো বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পণ্য (সাবান, তেল, বিস্কুট, চানাচুর) বিক্রি করেছেন। এভাবেই  ছেলে-মেয়েদের বড় করে তুলেছেন বিয়েও করিয়েছেন। 

আরও পড়ুন: ‘এডা ধান আইছে কালা কালা— লাগাইতে খরচ কম, লাভও বেশি’


বিজ্ঞাপন


তবুও শেষ হয়নি তার দুঃখের দিন। সন্তানের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না থাকায় জীবিকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পান। টাকা-পয়সা না থাকায় চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। সংসারে একের পর এক পরিবারের সদস্য বেড়ে যায়। পরিবারের চাহিদা ও বাসস্থান পর্যাপ্ত না হওয়ায় তার স্বামীর বসতভিটা বিক্রি করে দেন ছেলে মহির উদ্দিন। 

কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষা ধানশাইল ইউনিয়নের দাড়িয়ারপাড় এলাকার কাহিলাকুড়া বিলের এক কোনায় বসত গড়েছেন মনোয়ারা। ওই ভিটায় দুই কক্ষ বিশিষ্ট টিনের একটি ঘরের একটি কক্ষে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী, অপর এক কক্ষে থাকেন মনোয়ারার নাতিন। আর মনোয়ারা বসবাস করেন ছনের একটি ঘরে। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বসত ঘরটিও বসবাসের অযাগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি আসলেই পানি পড়ে ঘরের মধ্যে। তখন নাতিনের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় মনোয়ারাকে। 
BANESAমনোয়ারা জানান, দিন মুজুর ছেলে খুব কষ্ট করে সংসার চালান। প্রায় সময় মানুষের সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয় তাকে। বয়স্ক, বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডও নেই তার। এর মধ্যে আবার বসতঘরটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। টাকার জন্য ঘরটি ঠিকও করতে পারছেন না। বৃষ্টি হলে নাতিনের ঘরে আশ্রয় নিতে হয় তাকে। 

সরকারের কাছে নতুন করে একটি ঘরের দাবি জানিয়ে মনোয়ারা বলেন, একটি ঘর পেলে আমার থাকার কষ্ট দূর হবে। আমি একটি ঘর ভিক্ষা চাই।

আরও পড়ুন: লতিরাজে ‘রাজ’ চলছে পাঁচবিবির কৃষকদের

মনোয়ারার ছেলে মহির উদ্দিন বলেন, আমার মায়ের পা ভেঙে পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। সবসময় পায়খানা-প্রসাব করে, তাই ভাঙা-চোরা ঘরেই থাকেন। হাতে টাকা-পয়সা নাই, তাই ঘর মেরামত করতে পারছি না। তবে বৃষ্টি হলে আমার ছেলের ঘরে রাত্রি যাপন করেন মা। আমার যে অবস্থা, তাতে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। সরকারের সহযোগিতায় একটি বসত ঘর পেলে অনেক উপকার হবে। আমার মায়ের জন্য সরকারের কাছে একটি বসত ঘর চাই। 


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় শিক্ষক মো. হানিফ উদ্দিন বলেন, মনোয়ারা দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করেন। তার ছেলের আর্থিক অবস্থা ভালো না। মনোয়ারার বসতঘরটি বর্তমানে বসবাস অনুপযোগী। সরকারিভাবে যদি মনোয়ারার জন্য একটি ঘর করে দেওয়া হয়, তাহলে ওই বিধবা নারী নিয়ে একটু শান্তিতে থাকতে পারবে।

আরও পড়ুন: মৌচাষে ‘স্বর্গবাস’ আসাদের

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী জাহিদুল হক মনির ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি বানেছা বেগমের সেই ভাঙা-চোরা ঘরে গিয়েছিলাম। রোগে-শোকে খুব কষ্টে আছেন তিনি। সরকারিভাবে একটি ঘর করে দেওয়া হলে তার খুব উপকার হবে। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, সরকার এমন অসহায় লোকই খুঁজছে। তার বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। এমন অবস্থার কথা জানতে পারলে, অনেক আগেই খোঁজ নিয়ে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হত। দ্রুত সময়ের মধ্যে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর