মৌ চাষ করে ১২ বছরে ২৫ লাখ টাকা আয় করেছেন সিরাজগঞ্জের আসাদুল ইসলাম। এক সময় ছিলেন তাঁত শ্রমিক। সারাদিন কাজ করে মজুরী পেতেন ১০০ টাকা। এতে সংসার চলতো না ঠিকমত। অন্যের পরামর্শে ৩০ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করে শুরু করেন মৌমাছি চাষ। মধু সংগ্রহকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। মৌমাছি থেকে মধু সংগ্রহ করে আসাদুল এখন স্বাবলম্বী। এক সময়ের তাঁত শ্রমিক আসাদুল এখন নিজেই শ্রমিক খাটান তার মৌ চাষে। এতেই এখন ‘বড় সাফল্যের স্বর্গ’ দেখছেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার হাট পাঙ্গাসী গ্রামের বাসিন্দা আসাদুলের সঙ্গে কথা হয় বগুড়া সদরের শাখারিয়া জঙ্গলপাড়া গ্রামে। এই গ্রামের সড়কের পাশে এবং বিভিন্ন ফলে বাগানে চোখে পড়ে সারি সারি মৌমাছির বক্স। ফলের বাগান থেকে মধু সংগ্রহের পাশাপাশি চলছে মৌমাছি লালন পালন।
ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘ফুলে মৌমাছি বসলে দ্রুত পরাগায়ন হয়। ফলে জমির ধারে এই বক্স বসিয়েছি। এখন জমিতে তেমন ফসল না থাকায় মধু সংগ্রহ তেমন হচ্ছে না। মৌমাছিগুলোকে লালন-পালন করাই এখন প্রধান কাজ। তাই মৌমাছিকে বাড়তি খাবার হিসাবে চিনির শিরা খাওয়াতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ফুলে কিছু মিষ্টি জাতীয় তরল পদার্থ থাকে যা মৌমাছি না বসলে অন্যান্য কীটপ্রতঙ্গ খেয়ে ফেলে এবং ওই বিষাক্ততায় ফল খারাপ হয়। মৌমাছি ঐ রস তুলে আনলে ফলন আরও ভালো হয়। তাই আমরা আম, লিচু বাগানে বক্স বসিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে ১০-১৫ দিন আগে ৪৫০টি বক্স নিয়ে এসেছি, এক বাগানে ২৮০টি, আরেকটিতে ১৭০টি বক্স বসানো আছে।’
জানান, সরিষা মৌসুমে তিনি বগুড়া জেলার কাহালুতে আসেন মধু সংগ্রহ করতে। এবার এসেছেন বগুড়া সদরের জঙ্গল পাড়ায়। আসালত জামান মাস্টারের লিচু ও ইউক্যালিপটাস বাগান ভাড়া নিয়ে বক্স বসিয়েছেন। বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত মৌমাছি লালন পালন করবেন তিনি।
কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহের মৌসুম। পুরো মৌসুমে প্রতিটি বক্স থেকে ৫০ কেজির মতো মধু সংগ্রহ হয়। প্রতি বক্সে খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। এভাবেই ১২ বছরে তিনি আয় করেছেন ২৫ লক্ষ টাকা। গরু বিক্রির ৩০ হাজার টাকায় ১০টি বক্স কিনে শুরু করেন তার মৌ চাষ। বর্তমানে তার প্রায় ৫০০ বক্সে ১২ লক্ষ টাকার মৌমাছি আছে। মৌসুমে প্রতি বক্স থেকে ৬ হাজার টাকার মধু সংগ্রহ করে থাকেন।
লিচু ফুলের মধু ২৫০ টাকা কেজি, সরিষা ফুলের মধু ১৫০ টাকা কেজি, কালোজিরা ফুলের মধু ৫০০ টাকা কেজি, মিষ্টি কুমড়া ফুলের মধু ২০০ টাকা কেজি এবং বরই ফুলের মধু ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন আসাদ। পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন কোম্পানি মধু কিনে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/এএ