অতীতে খারাপ নির্বাচনের জন্য দেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, সেই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে দেশবাসীর সামনে একটা সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। নিশ্চয়ই সবাই সেই সুযোগ গ্রহণ করবেন।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ উপলক্ষে নীলফামারী সরকারি কলেজ মিলনায়তনে তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজার ও নতুন ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
বিগত নির্বাচনগুলোতে মৃত ব্যক্তিরা ভোট দিয়ে চলে গেছে— এমন উদাহরণের বিষয়ে তিনি কৌতুক করে বলেন, চাচা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখেন ১০ বছর আগে মারা যাওয়া তার স্ত্রীর নামে ভোট পড়েছে। তখন তিনি আফসোস করে বলেন, ১০ বছর হয় আমার সাথে দেখা করতে আসলে না। কিন্তু ভোটের সময় ঠিকই আসলে, তাও একটাবার দেখা করে গেলে না।
তিনি বলেন, আমরা কৌতুকের পর্যায়ে নিয়ে গেছি আমাদের ভোটার তালিকাকে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। একটা ভালো নির্বাচনের পূর্ব শত হচ্ছে একটা ভালো ভোটার তালিকা। শুদ্ধ নির্ভুল ভোটার তালিকা।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের থেকে সুবিধা বেশি দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানে যেসব রাজনৈতিক দল মাঠে ময়দানে নির্বাচনের কথা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সঠিক নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি নিয়েই দাবি তুলেছেন, কথা বলেছেন। সময় এসেছে তাদের কাছে দাবি করা- আপনারা এতোদিন ধরে যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছেন, আমাদের তা পূরণ করার সুযোগ করে দেন। পাশাপাশি আমি মনে করি আমাদের ইয়াং জেনারেশন এই জুলাই ও আগস্টের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সবার চোখ খুলে দিয়েছে যে নাগরিকের অধিকার কী জিনিস এবং ব্যক্তি নাগরিকের অধিকার খর্ব হলে কী হতে পারে। এটাকে কাজে লাগানো উচিত।’
বিজ্ঞাপন
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমি মনে করি আগামী নির্বাচনে সবাই অত্যন্ত সচেতন থাকব, সজাগ থাকবো, সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে যদি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আমার এজেণ্ট উপস্থিত থাকতে না পারে তাহলে যা হওয়ার তাই হবে ভেতরে। সার্বিকভাবে নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনা এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা শুধুমাত্র একটি বাড়ি বা একটি প্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্ভব নয়। এটি একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। একদম শুরু থেকেই সঠিক ভোটার তালিকা হওয়া থেকে শুরু করে ফলাফল ডিক্লিয়ার করা পর্যন্ত। আমি বিশ্বাস করি এইবারে আস্থাহীনতার জায়গাটা থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন কমিশন একটি পাত্র। সে যে রং ধারণ করবে, তার অধীনস্থ সকলে পানির মতো, সেও এই রং ধারণ করবে। আমরা চাইলেও রাতারাতি সকল লোককে যারা পূর্ববর্তী নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, অপসারন করতে পারব না, এটা সম্ভব নয়। তাহলে আমাদের যেটা করতে হবে, দেখতে হবে যে কারা এখানে অংশীজন বনে গিয়েছিল, আর কারা বাধ্য হয়েছিল। আমরা বিশ্বাস করতে চাই নির্বাচন কমিশন যদি শক্ত থাকি, স্বচ্ছ থাকি, সৎ থাকি আমাদের অধীনে যারা নির্বাচন করবেন তারাও সৎ থাকতে বাধ্য।’
এ সময় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহাবুবুর রহমান ভূইয়া, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম প্রমুখ।
ইএ