চারপাশে ফসলের বিস্তৃত মাঠ। মাঠের মাঝে বয়ে গেছে নহনা খাল। খালে দু’পাশে ফসলের সমাহার। ধান, ভুট্টা আলুসহ নানা ফসল আবাদ করে থাকেন কৃষকেরা। নহনা খালে ২ কোটি ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্মাণ করা হয়েছিল সুইস গেইট। স্থানীয় কৃষকদের উপকারের জন্য নির্মাণ করা হলেও কাজে আসছে না এই গেইটটি। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ গেইট এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের। দীর্ঘদিন থেকে সচল না থাকায় পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাখানায়।
বিজ্ঞাপন
ঠাকুরগাঁও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের জাউনিয়া গ্রামে সুইস গেইটটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। খরা মৌসুমে আবাদি জমিতে কৃষককে সেচ সুবিধা দিতে নির্মাণ করা হয় গেইটটি। শুরুতে সেটি খোলা ও বন্ধের কাজ হলেও প্রায় পাঁচ বছর ধরে কৃষকের কাজে আসছে না গেইটটি। কোনো ধরনের সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না কৃষকেরা। নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গেইটটি আর অন্যদিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানির স্রোত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহার না হওয়া গেইটটি থেকে চুরি হয়ে গেছে লোহা জাতীয় অধিকাংশ মালামাল। ফসলি মাঠের মাঝে হওয়ায় গেইটি ঘিরে নিয়মিত আসর বসে মাদকসেবীদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে কৃষিসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে করে আবাদে যোগ হচ্ছে বাড়তি খরচ। নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ। কৃষকদের উপকারে গেইটটি সংস্কার ও মেরামতের দাবি তাদের।
আরও পড়ুন
স্থানীয় কৃষক সফিউল আলম বলেন, আমাদের উপকারের জন্য এটি করা হয়েছে। শুরুতে আমরা উপকার ভোগ করেছি। সরকার কোটি টাকা খরচ করে খরা মৌসুমে সেচের জন্য করেছেন। অথচ এটি এখন কৃষকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সংস্কার করা জরুরি, এতে আমরা উপকৃত হব।
কলেজ শিক্ষার্থী আবু নাঈম ঢাকা মেইলকে বলেন, সন্ধ্যা নামলে এখানে বখাটে ছেলেদের আসর জমে। সব মাদকসেবীদের আড্ডাখানা পরিণত হয়েছে এটি। গেইটির যে মালামাল রয়েছে সেগুলো তারা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ছোট সিংগিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের সমিতির ব্যবস্থাপনায় একটি গেইট ও আরেকটি ওয়ার করা হয়েছে। শুরুতে আমাদের কৃষকদের জন্য এটি উপকার হলেও এখন কোনো কাজে আসছে না। প্রায় দুই বছর ধরে আমরা এলজিইডির সঙ্গে এটি সংস্কার নিয়ে কথা বলছি। পুনরায় মেরামত হলে আমাদের কৃষকদের কাজে আসবে এটি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম বলেন, সুইস গেইটটি এখন কৃষকদের জন্য সেচ সুবিধায় আসছে না। গত বছরে আমরা এটির স্টিমেট পাঠিয়েছি। এ অর্থ বছরেও প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে। বছরের মধ্য ভাগে মেরামত হবে বলে আশা করছি।
তবে কৃষকদের সেচ সুবিধা পেতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনঃসংস্কারের কাজ শুরু করা হবে বলে ঢাকা মেইলকে জানান, ঠাকুরগাঁও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন বিশ্বাস।
প্রতিনিধি/এসএস
