পটুয়াখালীতে একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা। এতে হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ। এ ছাড়া ইটভাটার জন্য কৃষিজমি থেকে মাটি কাটায় ফসল উৎপাদনও হুমকিতে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার আট উপজেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ৪৭টি। এর মধ্যে ১৬টিরই লাইসেন্স নেই। এসব ইটভাটায় ইট নির্মাণ করার জন্য ভাটামালিকরা কৃষকের কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে সেখানে ব্যবহার করছেন।
বিজ্ঞাপন
কৃষিজমিতে খননযন্ত্র বসিয়ে ১০ ফুটেরও বেশি গভীর করে চলছে মাটি কাটার উৎসব। মাটি ব্যবসায়ীরা অনেক সময় পুকুর খননের নামে মাটি কিনে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। এতে একদিকে প্রান্তিক কৃষকরা হারাচ্ছেন তাদের ফসলি জমি, অন্যদিকে চাষযোগ্য জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। জেলায় এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব ফসলি জমি নষ্ট করছে। আর ফসলি জমি নষ্ট হলেও এসব বন্ধে জেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ জেলার সাধারণ মানুষের।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩-এর মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণে ৫-এর (১) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলার মাটি কেটে সংগ্রহ করে তা ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, যিনি এই আইনের ৫ ধারা লঙ্ঘন করবেন, তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ না থাকায় ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কাটা বন্ধ করেনি। এভাবে মাটি কাটায় কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, এভাবে অবাধে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার কারণে কৃষিজমি ও জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ফসল উৎপাদন দিন দিন কমছে।
বিজ্ঞাপন
পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব বলছে, জেলায় ইটভাটা রয়েছে ৪৭টি। এর মধ্যে ১৬টিরই লাইসেন্স নেই। ১০-১২টি ভাটায় আইন মেনে কয়লা পোড়ানো হয়। বাকিগুলোয় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের কাঠ। চার-পাঁচটিতে রয়েছে ড্রাম চিমনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জেলা শহর ও গ্রামে যেভাবে ইটভাটা গড়ে উঠছে, এ সংখ্যা আরও বেশি হবে। এর মধ্যে কয়েকটি ভাটা পরিবেশসম্মত আধুনিক পদ্ধতিতে রূপান্তর হলেও বাকিগুলোয় ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি ও বনের কাঠ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশে গড়ে উঠছে এসব ইটভাটা। খাল-নদীর চর ও ফসলি জমির মাটি কেটে বানানো হচ্ছে ইট। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্য। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। মাটি কেটে নেয়ায় নদীর তীরবর্তী বাঁধগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) চন্দন কর বলেন, চর বা ফসিল জমির মাটি কাটা বা বিক্রির কোনো বিধান নেই। এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পটুয়াখালী পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এরই মধ্যে অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, নিয়মবহির্ভূতভাবে কেউ চরের মাটি কাটলে অথবা ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ালে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

