সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ক্ষুধার্ত কুকুরদের চিকন চালের ভুনা খিচুড়ি ও মুরগির মাংস খাওয়ান তারা

ইউসুফ দেওয়ান রাজু, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্ষুধার্ত কুকুরদের চিকন চালের ভুনা খিচুড়ি ও মুরগির মাংস খাওয়ান তারা

সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই মুরগির মাংস ও চিকন চাল দিয়ে রান্না করা হয় ভুনা খিচুড়ি। রান্না শেষ হলে গামলায় ভরা হয় খিচুড়ি। এরপর মাথায় সেই গামলা ও হাতে পলিথিনের প্যাকেট নিয়ে দুই বন্ধু রাতে সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ছুটে চলেন। প্রথমে দেখলে মনে হবে ফেরি করে খাবার বিক্রি করছেন তারা, কিন্তু তা নয় রাস্তায় বেওয়ারিস ৭০/৮০টি ক্ষুধার্ত কুকুরদের প্রতি শুক্র ও শনিবার খাবার বিলিয়ে বেড়ান তারা। রাতে এই খাবার পেয়ে মহাখুশি কুকুরগুলো লেজ নাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করে আর পেট পুরে খায়। মূলত বেওয়ারিস কুকুর ও বিড়ালদের প্রতি তাদের এক অন্যরকম মায়া ও ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ এটি।

thumbnail_Sirajgonj_(dog)_Pic_(2)


বিজ্ঞাপন


সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত গুড ফুড রেস্তোরাঁর মালিক সালেকুজ্জামান বাবু ও তার বন্ধু বণী আমিন ভুনা খিচুড়ি রান্না করে বিভিন্ন সড়কে ঘুরে বেওয়ারিস কুকুর ও বিড়ালদের খাওয়ান।

thumbnail_Sirajgonj_(dog)_Pic_(4)

মানবিক যুবক বণী আমিন বলেন, বর্তমানে ডাস্টবিনে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না বেওয়ারিস কুকুর ও বিড়াল। যার কারণে আমরা মুরগি মাংস ও চিকন চাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কুকুরদের খাওয়াচ্ছি। অসহায় বোবা প্রাণীদের সবাই খাবার দিলে তারা পেট ভরে খেয়ে বাঁচতে পারে। এজন্য আমাদের মতো সবার কাছেই অনুরোধ বোবা প্রাণীদের খাওয়াবেন।

thumbnail_Sirajgonj_(dog)_Pic_(5)


বিজ্ঞাপন


শহরের মুজিব সড়কস্থ গুড ফুড রেস্তোরাঁর মালিক সালেকুজ্জামান বাবু বলেন, আত্মতৃপ্তি থেকে কাজগুলো করছি। কারণ মানুষ ক্ষুধা লাগলে বলতে পারে। কিন্তু কুকুর হলো বোবা প্রাণী। ক্ষুধা লাগলে তারা বলতে পারে না। এজন্য আমরা নিজে থেকেই এই উদ্যোগে নিয়েছি। সেই সঙ্গে আমার রেস্তোরাঁর খাবার বেচে গেলে সেই খাবারগুলো ক্ষুধার্ত কুকুর ও বিড়ালদের প্রতিনিয়তই দিয়ে থাকি।

আরও পড়ুন

ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদির শুটিং অনুষ্ঠানে ভাঙচুর

তিনি আরও বলেন, শুধু বিশেষ দিনই না। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার আমরা রান্না করে শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেওয়ারিস ক্ষুধার্ত কুকুরদের খাবার দেয়। এতে আমাদের ভালো লাগে।

thumbnail_Sirajgonj_(dog)_Pic_(3)

লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিসটেন্ট, নেসকো লিমিটেডের কর্মচারী নাজমুন্নাহার পায়েল বলেন, আমি নিজেই বাসায় বিড়াল পালন করি। তাই রাস্তায় ক্ষুধার্ত কুকুর বিড়াল দেখলে আমার মায়া লাগে। এজন্য আমি অফিসে যাওয়ার সময় ও বাসায় ফেরার সময় ওদেরকে বিস্কুট ও পাউরুটি খাইতে দেয়। এজন সবাই আমাকে কুকুর ও বিড়ালের মা বলে ডাকে।

thumbnail_Sirajgonj_(dog)_Pic_(6)

সময় টিভির সিরাজগঞ্জের ক্যামেরাম্যান অমর্ত্য সেন বলেন, নানা অসুবিধার কারণে অনেকেই বাড়িতে কুকুর রাখতে পারেন না। বাড়িতে যদি কুকুর রাখতে না চান, তাহলে আমাদের মতো রাস্তার কুকুরকে রুটি খাওয়াতে পারেন। বোবা প্রাণীদের ভালোবাসার জন্য সবাই এগিয়ে আসেন।

thumbnail_Sirajgonj_(dog)_Pic_(8)

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, কুকুর আমাদের পরিবেশের কাজ করে থাকে। কাজেই কুকুর ও বিড়ালসহ যেকোনো পশুই হোক না কেন সব পশু-পাখির প্রতি আমাদের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। এরা পরিবেশ বান্ধব কাজ করে। কুকুর-বিড়াল ময়লা আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ দূষণ রাখে।

thumbnail_Sirajgonj_(dog)_Pic_(7)

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ. কে. এম আনোয়ারুল হক বলেন, সব প্রাণীর প্রতি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে। এই ইতিবাচক কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তাদের এই মহতী কাজকে ধন্যবাদ জানাই

তিনি আরও বলেন, বেওয়ারিস কুকুর ও বিড়াল যাদের আছে, তাদের আমরা বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন দিবসে সবাই এগিয়ে আসি। তাদের মতো সবাইকে এই অবলা প্রাণীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন তিনি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর