ভালোবেসে বিয়ে করেন রাফিউল ইসলাম শুভ। পড়াশোনা করেন দশম শ্রেণিতে। তার স্ত্রী জারাও পড়েন একই শ্রেণিতে। কিন্তু বিয়ের তিন মাস না যেতে না যেতেই নিভে গেল জারার সেই ভালোবাসার প্রদীপটি।
মৃত রাফিউল ইসলাম শুভ ডোমার থানার জোড়াবাড়ী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাব্বানী ইসলামের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
তিনি মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাতে রাফিউল ইসলাম শুভর শাশুড়ি এসে নিয়ে যায় তার মেয়েকে। সে সময় শুভ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। জানতে পেরে বাড়ি ফিরেই ৭ জানুয়ারি সকালে বউকে নিয়ে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হযে যায়। এর পর বউ না নিয়ে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা পরে একাই ফিরে আসেন বাড়িতে। তার কিছুক্ষণ পরেই শুভ চিৎকার করা শুরু করে যে তার বুক জ্বলে যাচ্ছে এবং মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিল। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে পরিচিত এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে মেডিকেলে নিয়ে যায়। দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। অ্যাম্বুলেন্স ওঠার সময় নুয়ে পড়েন শুভ।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ী ইউনিয়নের মিরজাগঞ্জ বহু উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্কুলের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা রহস্যজনক মৃত্যু (হত্যা নাকি আত্মহত্যা) এই ব্যানারে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন করেন।
এবিষয়ে ছেলের ভাবি ঢাকা মেইলকে বলেন, ঘোরার জন্য ঢাকায় গিয়েছিল। ঢাকা যাওয়ার ৪ দিন পর ফোন দিয়ে বলে যে আমি বাড়িতে যাচ্ছি। যে রাতে শুভ গাড়িতে ওঠে বাড়ি আশার উদ্দেশে, সেদিন সন্ধ্যায় জারা (শুভর স্ত্রী) তার মাকে ফোন করে বলে যে মা আমাকে এখানে আমার ভালো লাগছে না। আমাকে এসে নিয়ে যাও। কান্নাকাটি করে বলছে, কান্না শুনে উনি আবার কয়েকজন মানুষ নিয়ে আমাদের বাসায় আসে। জোরপূর্বক মেয়েকে নিয়ে যায়, আমরা তো একা পাঠিয়ে দেব না। কারণ ছেলে বাড়িতে নেই। ছেলে আসুক দু’জনে একসঙ্গে যাবে। আমরা বললাম, আপনার মেয়ে কী দুঃখে আছে বলেন, উনিও বলল, না আমার মেয়ে সুখেই আছে। যেহেতু যেতে চাচ্ছে যাক আপনারা কয়েকদিন পর গিয়ে নিয়ে আসবেন। এরপরে জোর করে নিয়ে যায়। তখন আমি বলি ছেলে বাড়ি এসে তাকে না পেলে উল্টাপাল্টা কিছু করলে তার জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন। এরপর সকালবেলা ছেলে বাড়িতে এস ব্যাগ রেখে বলে যে আমি শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছি। এরপর তার শাশুড়িকে ফোন করে বলে আমি আপনাদের বাড়িতে আসতেছি। ওর শাশুড়িও বলে আস। শ্বশুর বাড়ি থেকে আবার ফিরে আসে ১০টার দিকে। এসে রুমে শুয়ে মোবাইল চাপতেছে। আমার মেয়ে তার পাশেই ছিল। আমার মেয়েকে বলে পানি আনার জন্য তার কিছুক্ষণের মধ্যে চিৎকার শুরু করে তার বুক জ্বলে যাচ্ছে এবং মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিল। আমার শ্বশুর বাইরে ছিল। উনি এসে পরিচিত একটি মোটরসাইকেলে তুলে দিয়ে মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। মেডিকেল থেকে ১২টার দিকে মৃত্যুর খবর আসে।
বিজ্ঞাপন
ছেলের বাবা রাব্বানী ইসলাম বলেন, দুই জনকে মেডিকেলে পাঠিয়ে দেই। আমার যেতে একটু দেরি হয়, ততক্ষণে তারা ওয়াশ বা যা করার লাগে সব করে ফেলছে। আমি গিয়ে দেখি, কয়েকজন নার্স তারা ইনজেকশন পুশ করার জন্য কোনো রকম শিরা খুঁজে পাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় একজন চেষ্টা করার পর পুশ করার পর সামান্য পরিমাণ রক্ত বেরিয়ে এলে উনি বলে যত দ্রুত সম্ভব রংপুরে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে তুলতে আমার ছেলে বিদায় নেয়।
মেয়ের মা রশিদা বেগম জানায়, আমি যখন ফোন পাই তখন আমি বাইরে ছিলাম। কে একজন ফেন দিয়ে বলে আপনার জামাইয়ের এই রকম সমস্যা। আমি তো কোনোদিন তাকে জামাই বলতাম না। তাকে আমি সব সময় বাবা বলে ডাকতাম। ছেলেটা এমন ঘটনা ঘটাইল তারা কী কেউ বুজতে পারল না। আচ্ছা সে বিষয় বাদ দিলাম তারা যে আমার ছেলেটাকে মেডিকেলে পাঠাইল। কেউ সঙ্গে গেল না, অপরিচিত ২ জন ব্যক্তির সঙ্গে মেডিকেল পাঠাইল। আমি এর বিচার চাই। আমার ছেলে কী করছে না করেছে জানি না। তারা আমার ছেলেকে তো বাড়ি থেকে মেডিকেলে নিয়ে গেছে। আমি এটাই জানি। এর সুষ্ঠু বিচার চাই আমি। সব সমস্যার সমাধান আছে, তারা যে বলছে আমার বাড়ি গেছে। আমার বাড়ির আশপাশে তো মানুষ আছে। তারা তো জানবে বা দেখবে। প্রয়োজনে আমার মেয়ে কথা বলবে। তার এত সুন্দর ভালোবাসা নষ্ট করল তারা। আমার মেয়ে তাকে এত ভালোবাসতো এত নির্যাতন করেছে এর পরেও আমি তাকে নিয়ে যেতে পারিনি। সেদিন মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। সেই ভয়ে আমাকে ফোন দেয় এবং আমি এসে তাকে নিয়ে আসি। সেদিন আমার কাছে সব কিছু স্বীকার করেছে। তারা যদি আমার মেয়েকে আমার সঙ্গে পাঠিয়ে না দেওয়া হয় তাহলে আমি কী নিয়ে আসতে পারতাম।

এ বিষয়ে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আরিফুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ছেলে ও মেয়ে যখন পালিয়ে যায় ছেলে ও মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হাওয়ার কারণে মেয়ের মা তখন একটি মামলা করেন। সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মেয়ের নামে জমি লিখে দেয় এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিবাহ দেওয়া হয়, এবং সেখানে বলা হয় লেখাপড়া শেষ করার পড় প্রাপ্ত বয়স্ক হলে লিখিতভাবে বিবাহ দেওয়া হবে। ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের কাছে জমি লিখে নেওয়ার জন্য ছেলেকে তার পরিবার চাপ প্রয়োগ করত। ছেলেকে যখন তার স্ত্রী বলতো তখন রাজি হতো না তার স্ত্রী। ঘটনার দিন মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলেছিল জমি লিখে না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে। এর পর মেয়ে ভয় পেয়ে তার মাকে কল দেয়। এর পর মেয়ের মা এসে অনেক ঝামেলা করে নিয়ে যায় মেয়েকে। মেয়েকে তার জামাই এবং শাশুড়ি সবাই মিলে মেয়েটিকে নির্যাতন করতো। এরপর মেয়ে গিয়ে ভয় দেখায় যে আমি তোমার সংসার করব না। পরিবারের এত চাপ তোমার এত চাপ রাখব না এ জীবন। এটি বলার পর আত্যহত্যার পূর্ব মুহূর্তে ভয় দেখানোর জন্য তার স্ত্রী জারাকে বিষাক্ত ওষুধের ছবি ও ভয়েজ পাঠায় শুভ। পরেই ঘটনা ঘটে। ছেলের লাশ দেখার জন্য মেয়ের মা এবং মেয়ে আসলে জমি ফেরত দেওয়ার জন্য তাদের আটকে রাখা হয়। ছেলের বাবার বর্তমান দাবি যেহেতু আমার ছেলে নেই। সেহেতু জমি ফেরত দিয়ে দিতে হবে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
প্রতিনিধি/এসএস

