চাঁদপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ সরকারি বিভিন্ন দফতর একই স্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
দুপুরে শহরের পুরাণ বাজার ডিগ্রি কলেজে দিবস উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।
তিনি বলেন, ওই সময় নক নক এই শব্দটা বাঙালি জাতির একটা ভয়ের শব্দ ছিল। অনেকে দরজা খুলেছে আবার অনেকে দরজা খুলে নাই। যারা খুলে নাই, তাদের দরজা ভেঙে খুলে তুলে নিয়ে গিয়েছে। তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন করে গুলি করে হত্যা করে ফেলেছিল। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তারা এরকম করেছিল।
বিজ্ঞাপন
ডিসি বলেন, পাক হানাদার বাহিনী জানত তারা এই দেশে বেশিদিন থাকতে পারবে না। তাদের মনের আক্রোশ, হিংসা, বিদ্বেষ মেটাতে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের মেরে ফেলেছিল। আমরা যেন মাথা উঁচু করে না দাঁড়াতে পারি। দেশটা যেন উঁচু হয়ে না দাঁড়াতে পারে। তার জন্যেই এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তখন পরামর্শই দিতেন বুদ্ধিজীবীরা। তারাই মুক্তিযোদ্ধার মাস্টারমাইন্ড ছিল। আমরা এখনও মুক্তিযোদ্ধা বা বুদ্ধিজীবীদের সেই সম্মান দিতে পারছি না। সম্মান বলতে তাদের সম্পত্তি বা টাকা দেওয়া নয়। সম্মান বলতে তাদেরকে শ্রদ্ধা করা। দেশের প্রকৃত ইতিহাসকে লালন করা এবং তা পালন করতে হবে।
তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, যদি তাদের জিবনী সম্পর্কে জানবে, তাহলে তোমাদের দেশপ্রেম জন্মাবে। এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্পর্কে তোমাদের জানতে হবে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তারাই এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চাঁদপুরের উপপরিচালক মো. গোলাম জাকারিয়ার সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমজাদ হোসেনর সঞ্চালনায় অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান, আব্দুল হামিদ মাস্টার, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মোবারক হোসেন চৌধুরি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও প্রিয়াস গোস্বামী।
এছাড়াও জেলা পুলিশের উদ্যোগে শহরের বাবুরহাট এলাকায় পুলিশ লাইন্সে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুলিশ সুপার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা সানা উল্লাহ খান, সরদার আবুল বাশার, ডা. কাজী হাসেম, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী প্রমুখ।
এছাড়াও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, জেলার ৮ উপজেলার সরকারি-বেসরকারি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুবই গুরুত্বসহকারে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
প্রতিনিধি/এসএস