কুষ্টিয়ায় সরকারি চাল সংগ্রহ অভিযানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মিরপুর, দৌলতপুরসহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় অনেক বন্ধ ও লোকসানের মধ্যে থাকা চালকলের নামে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে মিল মালিকরা জানেন না। স্থানীয় মিল মালিকদের অভিযোগ— সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে এসব অনিয়ম হচ্ছে।
জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চালকলগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয় লাইসেন্স থাকা এবং চাল সরবরাহের সক্ষমতা সম্পন্ন চালকলদের। প্রতিবছর একটি কমিটি এই চালকলগুলো নির্বাচন করে এবং বরাদ্দ দেয়। তবে কুষ্টিয়ার কিছু এলাকায় এই নিয়ম মানা হয়নি, যা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় তদন্তে দেখা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিরপুর উপজেলার শেখ রাইচ মিলের নামেও ১২ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা মিরপুরের বাসনা রাইচ মিলের, যা ৪ বছর আগে বিক্রি হয়ে গেছে, তবে তার নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিকটন চাল। মের্সাস বিআর রাইচ মিলের মালিক বজলুর রহমান জানান, তার মিলের লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় এটি বাতিল হয়ে গেছে, কিন্তু তার নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২ মেট্রিকটন চাল।
শেখ রাইচ মিলের মালিক মমিনুর রহমান জানান, তাদের মিল ২০২০ সাল থেকে বন্ধ, কিন্তু এই সময়েও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্যদের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করা হয়। বাসনা রাইচ মিলের মালিক রাশেদুজ্জামানও বলেন, তার মিল লোকসানের কারণে বন্ধ করা হয়েছে এবং তিনি খাদ্য বিভাগের বরাদ্দের বিষয়ে কিছু জানেন না।
কিছু মিল মালিক অভিযোগ করেন, কুষ্টিয়া এবং দৌলতপুর উপজেলার বেশিরভাগ মিলই বর্তমানে বন্ধ, কিন্তু সেগুলোর নামেও চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
মিরপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান দাবি করেন, মিলের তালিকা যাচাই-বাছাই করে পাঠানো হয়েছে এবং এরকম কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, মিল মালিকদের অভিযোগ পেলে তা যাচাই করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, প্রতি মৌসুমে মিলের সার্ভে করা হয় এবং যেসব মিল বর্তমানে কার্যকর আছে, শুধু সেগুলোকেই তালিকাভুক্ত করা হয়। তিনি বলেন, যদি কোনো মিল সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জানান, মিরপুর ও দৌলতপুরে অধিকাংশ মিলের অস্তিত্ব নেই। তিনি রাজনীতির কারণে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না।
এ বছর কুষ্টিয়ায় ৪৭ টাকা কেজি দরে ১৯ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে, যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
প্রতিনিধি/এইউ