বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

কাঁচা-পাকা সোনালী আমন ধানে কৃষকের লুকানো স্বপ্ন

অলিউল্লাহ্ ইমরান, বরগুনা
প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

কাঁচা-পাকা সোনালী আমন ধানে রয়েছে কৃষকের লুকানো স্বপ্ন

কাঁচা-পাকা সোনালী আমন ধানে ছেয়ে গেছে বরগুনার ফসলের মাঠ। দেখে মনে হয় যেন সোনার পারদ পড়ে আছে ধানক্ষেতে। বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে গাছের ওপর ভালো ফলন পেয়ে কপালের ভাজ কিছুটা সমান হয়েছে, এবং কৃষকের মুখে ফুটেছে আনন্দভরা হাসি। কেউ কেউ পাকা সোনালী আমন ধান ঘরে তোলার আগে বাড়তি ফসল হিসেবে রেলী পদ্ধতিতে গম ও খেঁসারি চাষের জন্য বীজ ফেলছেন ফসলি জমিতে।

প্রকৃতির মাঝে ছুটে গিয়ে সদর উপজেলার বুড়িরচর, আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়ন ও তালতলী উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের নলবুনিয়া গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রাস্তার দু’পাশ থেকে সোনালী আমন ধানের মাঝে তাকালে এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়ে। কৃষকের সাথে কথা বললে নানা কষ্ট-দুর্দশা কাটিয়ে সফলতার গল্প তুলে ধরে।


বিজ্ঞাপন


কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। দুই ধাপে ছয়টি উপজেলায় ২১ হাজার ৮০০ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে আমনের বীজ ৫ কেজি ও দুই ধরনের সারের ২০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে।

আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে আমনের বীজ নষ্ট হয়েছিল। তবে বিভিন্ন চেষ্টায় বীজ সংগ্রহ করে আমন ধানের চাষাবাদ করেছি, এবং এখন পর্যন্ত গাছে ভালোই ফলন হয়েছে। মন ভালো লাগলেও ধান পাকার পর ঘরে তুললে পুরোপুরি তৃপ্তি পাবো।’

বুড়িরচর ইউনিয়নের কৃষক অর্জুন বিপাদো বলেন, ‘এ বছর ৩০ শতাংশ জমিতে আমনের চাষাবাদ করেছি। চলতি বছরে আমন মৌসুমে রিমালের পর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। তবে ধান গাছ রোপণের পর বৃষ্টিপাত পর্যাপ্ত হওয়ায় ধানে পানি যথাযথভাবে পেয়েছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে।’

তালতলীর নলবুনিয়া গ্রামে রেলী পদ্ধতিতে ধানক্ষেতে গম চাষের বিষয়ে কৃষক ইদ্রিস মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ অস্ট্রেলিয়ার গবেষক ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগীর গবেষণায় নলবুনিয়া গ্রামে আমার প্রচেষ্টায় ২০ জন কৃষক রেলী পদ্ধতিতে ধানক্ষেতে গম চাষ করেছে, এবং সাফল্য পেয়েছে। এ বছর বিভিন্ন এলাকার অনেক কৃষকই নিজস্ব উদ্যোগে ধানক্ষেতে গম বীজ আবাদ করেছে। এছাড়া আমার ধান গাছে অনেক সুন্দর ফসল হয়েছে।’


বিজ্ঞাপন


কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি বছরে আমন বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৭০৭ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ হেক্টর জমিতে। আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯ হাজার ৪৯২ হেক্টর জমিতে, এবং আমনের আবাদ হয়েছে ৯৯ হাজার ১৩২ হেক্টর জমিতে। এবছর প্রতি ১ হেক্টর জমিতে ৩-৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

গবেষক মৃন্ময় নিয়োগী বলেন, ‘এ বছর বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে, তবে কৃষকরা সোনালী ফসলের মাঠে কাঁচা ধান গাছে ফসল পেয়ে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। পাকা ধান ঘরে তোলার আগে গম ও খেঁসারির আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া, আমন ধানের মাঝে গম ও খেঁসারি আবাদের জন্য অনেকেই রেলী পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিটি সহজ এবং সাফল্য বয়ে আনবে। শুধু গম নয়, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরিষা সহ রবি শস্যের আবাদও ধানখেতে করা যাবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি আবাদ করলে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যাবে। এতে কৃষক একসাথে অনেক লাভবান হয়ে তাদের মুখের হাসি অটল রাখতে পারবে।’

dd

বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘কাঁচা-পাকা সোনালী আমন ধানে রয়েছে কৃষকের লুকানো স্বপ্ন। চলতি বছরে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আমন ধানের ফলন দেখে কৃষকের মুখে কিছুটা হাসি দেখা যাচ্ছে। তবে সোনালী আমন ধান কেটে কৃষক যখন বাসায় তুলবে, তখন তার হাসি পূর্ণতা পাবে। কৃষি অফিসসহ বিভিন্ন কোম্পানি ও এনজিও কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছে, এবং কৃষকেরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। এজন্য ফসল তুলনামূলক ভালো হয়েছে। তাই এখন কৃষক স্বস্তি পাচ্ছে। আশা রাখছি কৃষকরা এ বছর আমন ধানের বাজারমূল্য ভালো পাবেন, এবং পাশাপাশি রেলী পদ্ধতিতে গম ও খেঁসারি আবাদ করে ভালো ফসল উৎপাদন করে তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়ে আনুক।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর