বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের দৌরাত্ম্যে বিরক্ত সেবা প্রত্যাশীরা

ছায়েদ আহমেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী)
প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের দৌরাত্ম্যে বিরক্ত সেবা প্রত্যাশীরা

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌরাত্ম্যে রীতিমতো ত্যাক্তবিরক্ত স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশীরা। তাদের বাড়াবাড়ি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রোগীরা। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীরা একাধিক চক্র গড়ে তুলে রোগীদের নানাভাবে হয়রানি করারও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে হাতিয়া পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ড চরকৈলাশ এলাকার মো. রাশেদ নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে জনৈক ডাক্তারের দালালের মাধ্যমে হয়রানি ও নাজেহালের শিকার হন। পরে তিনি ‘হাতিয়া উপজেলা হাসপাতালে দালালমুক্ত পরিবেশ চাই’ মর্মে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দেন। এসময় মো. রাশেদের সঙ্গে অন্তত ৬০ জন ভুক্তভোগী ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

সাতক্ষীরা মেডিকেলে কেনাকাটা না করে ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ভুক্তভোগী মো. রাশেদ জানান, সাড়ে ১১টার দিকে আমি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গেলে ডাক্তার রুমের সামনে থাকা ব্যক্তিটি ভিজিটের নাম করে আমার থেকে ৫০০ টাকা চায়, পরে আবার ৩০০ টাকা দিতে বলে। অফিস টাইমে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ডাক্তারের লোকটি আমার সঙ্গে মারামারি লাগে। সেই সঙ্গে হাতিয়া পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইলিয়াছ নামের এক ব্যক্তি জানান, গতকাল হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এলে আমাকে কয়েকটা টেস্ট দেয়। পরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কয়েকজন লোক এসে একেকজন একেক দিকে আমাকে টানাহ্যাঁচড়া শুরু করে।

thumbnail_IMG20241125121106

পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সোহরাব নামের এক কিশোর জানান, জনৈক নারী ডাক্তার অফিস চলাকালীন ৫০০ টাকার কম ভিজিটে তিনি রোগী দেখেন না।


বিজ্ঞাপন


এছাড়া আনোয়ার, রবিন, দিদার, নুরুল ইসলাম এবং উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের সোহেল নামীয় ব্যক্তিরা জানান, যখনই তারা নিজেরা কিংবা কোনো রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসেন তখনই ডাক্তারদের দালাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এজেন্ট দ্বারা হয়রানির শিকার হন। কখনও কখনও নাজেহাল কিংবা হেনস্তার শিকারও হন।

আরও পড়ুন

পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে নয়ছয়, রাবিতে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি

এসব অভিযোগকারী ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশ এবং দূরবর্তী এরিয়া মিলিয়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৪ থেকে ১৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক। কতিপয় চিকিৎসক অকারণেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নির্দিষ্ট করে পাঠাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। রোগীরা বাধ্য হয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চলছে চিকিৎসার নামে কমিশন ও রমরমা সেবা বাণিজ্য। হাসপাতালের চিকিৎসক ও দালালদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে জমজমাট হয়ে উঠেছে ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসা। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের প্রয়োজন ছাড়াই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলে দেওয়া হচ্ছে, কোন প্রতিষ্ঠানে এসব পরীক্ষা করাতে হবে।

thumbnail_IMG20241125121019

সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে অপরদিকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত চিকিৎসা সেবা থেকেও।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিসা রানী সরকার অভিযোগের ব্যাপারে জানান, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও দালালরা যাতে অফিস চলাকালীন হাসপাতালে ঢুকতে না পারে সেজন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান হাসপাতালে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে টিএইচর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর