শিক্ষার্থীদের রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসতে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে এসেও নেই স্বস্তি। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ও একটি টিনশেডের নিচে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। এক মাসের বেশি সময় আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পদ্মার বুকে বিলীন হয়েছে।
কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি তো আছেই, এর ওপর একসঙ্গে তিন শ্রেণির পাঠদান চলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কারও কথা ঠিকভাবে শুনতে পারছিল না। ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন দুজন শিক্ষক। তিন সারিতে চলছিল তিনটি শ্রেণির পাঠদান।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণ করা সরকারি জমিতে ৫২ নম্বর পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেল।
গত ৫ অক্টোবর সকালে একই ইউনিয়নের নদীর ওপারে আহাম্মেদ মাঝি কান্দি এলাকায় অবস্থিত স্কুল ভবনটি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়।
এরপর থেকেই পদ্মা সেতু অধিগ্রহণ করা সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই এখন শ্রেণিকক্ষ ব্যতীত বাইরে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। বৃষ্টি বা রোদ হলে স্থানীয় একটি মাদরাসার রান্না ঘরের ঝাপের নিচে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নেয়।
বিজ্ঞাপন
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয় বিদ্যালয়টি। স্থাপিতর পর থেকে টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা মেঝের ঘরেই চলছিল পাঠদানের কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের একটি ভবনে ছিল পাঁচটি কক্ষ। পাঁচ কক্ষের ভবনটি গত ৫ অক্টোবর নদী গর্বে বিলীন হয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির রায়হানা ও চতুর্থ শ্রেণির মুনিয়া আক্তার বলে, আমাদের স্কুল ভবনটি নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে। তাই নদী পাড় হয়ে খোলা আকাশের নিচে এসে ক্লাস করতে হচ্ছে। রোদ ও বৃষ্টি হলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই আমাদের একটি বিদ্যালয়ের ভবন দরকার।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন নদীতে বিলীন হওয়ার পর আমরা অভিভাবকেরা চিন্তায় আছি।
আহাম্মদ মাঝিকান্দি এলাকার আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা নদী পাড় হয়ে ওই বিদ্যালয়ে পড়ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম মিয়া (শান্ত) বলেন, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়ের ভবনটি ধসে পড়ে। এরপর থেকে বাধ্য হয়ে নদী পাড় হয়ে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণ করা সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচেই পাঠদান করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে ১২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশির ভাগই আসেনি ভবন বিলীন হওয়ায়।
এ বিষয়ে জাজিরা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মিহাজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীতে বিলীন হওয়ায় নদী পার হয়ে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণ করা সরকারি জমিতে খোলা আকাশে ও স্থানীয় একটি মাদরাসার রান্না ঘরের ঝাপ উঠিয়ে পাঠদান চলছে। তবে অস্থায়ীভাবে একটি টিনসেট করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরজন্য বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয়ের ভবনটি করা যাবে।
প্রতিনিধি/এসএস