শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ঢাকা

কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

২১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ১২ জন, সেবা ব্যাহত

মো.হাবিবুর রহমান,নড়াইল
প্রকাশিত: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

২১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ১২ জন, সেবা ব্যাহত

চিকিৎসক পদ ২১টি। যার বিপরীতে চিকিৎসক আছেন ১২ জন। চিকিৎসক সংকটের সঙ্গে রয়েছে নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট। নার্সের পদ ৩৭টি আছে ২৫ জন। তৃতীয় শ্রেণির ২৮টি পদে আছে ১৮ জন। চতুর্থ শ্রেণির মোট ৩৬টি পদ থাকলেও জনবল রয়েছে মাত্র ৬টি। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং রোগীরা। এ চিত্র নড়াইলের কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা ২ লাখ ৪৩ হাজার মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশা করেন ৫০ শয্যা কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে দীর্ঘদিন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই গুরত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চলছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল ও চিকিৎসক সংকট।


বিজ্ঞাপন


কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদ, নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং রোগীরা।

kaliya_20240725_120622072

এতে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সরকারি খরচে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন। উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

আরও পড়ুন

প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ, তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ

একসময় সিজার ও অপারেশন হলেও এখন তা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। এতে করে প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি প্রাণঘাতীর ঘটনাও ঘটছে। অচল হয়ে পড়ে আছে এক্স-রে মেশিন।

উপজেলার বড় কালিয়ার মুসলিমা বলেন, ‘আমার প্রেসার ডায়াবেটিস রোগ। ডাক্তার দেখাতে আসছি। ডাক্তার পাচ্ছি না। এমনিতেই অসুস্থ। দাঁড়িয়ে থেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ডাক্তার পালি দেখায়ে বাড়ি চলে যাতি পারতাম’।

N07-21-600x337

কাঞ্চনপুর গ্রামের সত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুর রউফ মোল্যা বলেন, ‘আমার হাতের ব্যাথার জন্য আইছি। ডাক্তার পাচ্ছি না। চিকিৎসা কারে দিয়া করাব’।

চাদপুর গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমি পেটের ব্যাথার জন্য ভর্তি হই। দুই দিন হলো প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেও ওষুধ পাচ্ছি না। বাথরুমের অবস্থা খুবই খারাপ, নোংরা’।

বৌদ্দপটি গ্রামের দাউদ আলী ‍শিকদার বলেন, ‘আমি স্ট্রোকের রোগী। দেড় মাসের মতো হলো ডাক্তারের অভাবে ভালো কোনো চিকিৎসা পাচ্ছি না। আজকে দেড় ঘণ্টা হলো অপেক্ষা করছি। শুধু আমি না আরও অনেকে অপেক্ষা করছে। ডাক্তার নাই, সেবা পাচ্ছি না। যদি ডাক্তার থাকে সেবা পাই তাহলে সকলের জন্য ভালো হয়।

আরও পড়ুন

আন্তঃনগর ট্রেন লোহাগড়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবিতে মানববন্ধন

কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ হাসিব বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা খুবই বিপাকে আছি। এতগুলো পদে লোকবল না থাকায় রোগীর সঠিক সেবা দেওয়া ও ব্যাহত হয়। তারপরও আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু পদে লোক না থাকায় চাইলেও সঠিক সেবা দেওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, নিয়মিত অর্ধ-শতাধিকের বেশি ভর্তি রোগীসহ বহির্বিভাগে ৪৫০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে না যায়।

Narail-kalia-hospital20161003121139

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও (ভারপ্রাপ্ত) ডা. পার্থ প্রতীম বিশ্বাস বলেন, ৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও তার বেশি রোগী থাকে, আউট ডোরে প্রতিদিন ৪৫০ জনের মতো রোগী আশে তাদের সেবা দিতে। ডাক্তার সংকটের জন্য আমাদের ডিউটি আওয়ারে বেশি সময় দিয়ে চাপের মধ্য দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রশিদ  বলেন, জনবলের সংকট না থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শূন্য পদের অনুকূলে কোনো জনবল পাওয়া যায়নি। ডাক্তার ও জনবল সংকট নিয়োগের জন্য বারবার চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। নিরসন হলে সাধারণ রোগীদের সেবার মান বাড়বে।

সার্বিক বিষয়ে নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রশিদ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কালিয়ায় চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি আমি অবগত আছি। এ ব্যাপারে দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করছি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর