নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় নবগঙ্গা নদীর ওপর বারইপাড়া সেতুর নির্মাণ কাজ তিন দফায় সময় বেড়েছে। ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। বদলেছে নকশা, বদলেছে ঠিকাদারও। তবুও যেন শেষ হচ্ছে না কাজ।
যদিও সড়ক বিভাগ বলছে, জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছর জুনের মধ্যেই সেতু নির্মাণের বাকি কাজ শেষ হবে। তবে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও চলাচলকারীদের ধারণা নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে তার ঠিক নেই। আমাদের স্বপ্ন কী দুঃস্বপ্ন হবে? ২০১৮ সালে শুরু হয়ে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সাড়ে ছয় বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। সেতুর নকশায় জটিলতায় ৬৫ কোটি টাকার সেতুর নির্মাণ ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, কালিয়া উপজেলায় প্রায় ২৩১টি প্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বিশেষ করে জেলা সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলার সরাসরি যোগাযোগের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। কালিয়া উপজেলাকে নড়াইল জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে উপজেলার বারইপাড়া এলাকার এই নবগঙ্গা নদী। জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলার মানুষদের। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বারইপাড়া ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালে বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্প-কলকারখানা। এলাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য শহরে আনতে চরম দুর্ভোগে পড়েন। এছাড়া এলাকায় মারামারি ঘটনা ঘটলে পুলিশ যথাসময়ে ঘটনাস্থলে আসতে পারে না, আগুন লাগলে দমকল বাহিনী ও জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, সড়ক পথে নড়াইল সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলাসহ, বাগেরহাট, খুলনা, গোপালগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে শুরু হয় নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া বারইপাড়া সেতুর নির্মাণ কাজ। ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণে চুক্তি মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল অ্যান্ড মঈনুদ্দিন বাসী কনস্ট্রাকশন।
প্রথম থেকেই অল্প শ্রমিক দিয়ে ধীর গতিতে কাজ শুরুর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে করোনার জন্য আরও পিছিয়ে পড়ে কাজ। এরপর ধরা পড়ে নকশা জটিলতা। থেমে যায় কাজ। পরে দুই দফা সময় বাড়িয়ে নদীর দুই তীরবর্তী অংশের সংযোগ সড়কসহ ১৫টি পায়ার এবং ১১টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলেও মধ্যবর্তী অংশের ৩টি স্প্যান বসানোর কাজ এখনও বাকি।
এর মধ্যে ২০২০ সালের ২০ জুন মাসে একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ৯ নম্বর পিলারটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাল্কহেডের ধাক্কায় ৯ নম্বর পিলারটি আবার নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার পর মূল অংশের ৪টি পায়ার ও ৩টি স্প্যান বসানোর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই সড়ক বিভাগ প্রথম মেয়াদের চুক্তি শেষ করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজিস্ট লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতুর বাকি অংশ নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, বিদেশ থেকে আমদানি করা ৮৬ দশমিক ৭৩ মিটার স্টিল আর্চ স্প্যানসহ আরও দুটি স্প্যান এবং বাড়তি পায়ারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
বিষ্ণুপুর গ্রামের জ্বিলহজ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, সাড়ে ছয় বছর ধরে সেতু হয়ে ও হচ্ছে না। আমরা খুবই ভোগান্তিতে আছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পারাপার হতে হয়। ব্রিজটার কাজ দ্রুত শেষ হলে আমাদের যাতায়াতের ভোগান্তি শেষ হতো।
মাধপপাশা গ্রামের ডা. অশীম কুমার অধিকারি ঢাকা মেইলকে বলেন, এই কালিয়া বারইপাড়া যে সেতুটি নিয়ে আমাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল বাস্তবায়ন হওয়ার প্রক্রিয়া দেখেছি কিন্তু বাস্তবতা হলো আজকে ছয় সাত বছর হয়ে গেল কিন্তু সেতুটি পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হতে পারল না। এখানে প্রশ্ন যে আমাদের স্বপ্ন কি দুঃস্বপ্ন হবে? আমরা এলাকাবাসী এটুকু আশাকরি সেতু হলে কালিয়াবাসী নড়াইলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য খুবই উপকৃত হব।
নড়াইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নবগঙ্গা নদীকে ‘সি’ গ্রেডের নদী হিসাবে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়। পরে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নবগঙ্গা নদীর গ্রেড পরিবর্তন করে ‘বি’ গ্রেডের নদী হিসেবে প্রতিবেদন পাঠায়। পরবর্তীতে তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী সেতুর নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে একনেক সভায় নকশা পরিবর্তন করে স্টিল স্প্যান বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে নির্দিষ্ট মেয়াদে সেতুর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
প্রতিনিধি/এসএস