এবার বরিশালে ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরও শরীরে থেকে যাচ্ছে ডেঙ্গুর ভাইরাস। এর মধ্যে শতকরা ৮৭ ভাগ রোগীই গ্রামের। চিকিৎসকেরা এ বিষয়ে গবেষণার দাবি করেছেন। এ বছর এ পর্যন্ত বরিশালে সাড়ে তিন হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত দেড় মাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার। এ পর্যন্ত ২০ জন মারা গেলেও গত ৪০ দিনে মারা গেছেন ১২ জন। এসব বিষয় উদ্বিগ্ন করে তুলেছে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের।
বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, ডেঙ্গুর ভ্যারিয়েন্ট আমরা রোগীর রোগ থেকে নির্ধারণ করে থাকি। এবার বেশিরভাগ রোগী ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এদের জ্বর থাকে কম সময়, কিন্তু ডায়রিয়া, বমি ও তীব্র মাথাব্যথা থাকছে বেশি। রোগ সেরে যাওয়ার পরও রোগীর শরীরে ডেঙ্গুর আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এটা ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্টের ফলেও হতে পারে। এটা এখন গবেষণার বিষয়। তা ছাড়া শহরের চেয়ে শতকরা ৮৭ ভাগ রোগী মিলছে গ্রামের। চিকিৎসকদের এমন মন্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের সাম্প্রতিক মাঠপর্যায়ের গবেষণায়। সম্প্রতি ১০টি স্পটে ডেঙ্গুর সন্ধান চালিয়ে ছয়টিতে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: নাটোরে ৩ হাজার নারী-পুরুষ পেল ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, আগের মতো নির্ধারিত কিছু স্থান যেমন পরিত্যক্ত টায়ার, ফুলের টব কিংবা টিনের চালে ডেঙ্গুর লার্ভা মিলছে না। বরং কেটে ফেলা গাছের গর্তে জমে থাকা খোলা স্বচ্ছ পানিতেও লার্ভা মিলছে। তাদের মতে, বৃষ্টি বেশি হওয়াতে জমে থাকা সব পানিতেই লার্ভা মিলছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের কীটতত্ত্ববিদ মাহফুজা পারভিন বলেন, আমরা আমাদের গবেষণার সময় এমন বাড়িও পেয়েছি যেখানে তিন থেকে চার স্থানে ডেঙ্গুর লার্ভা ছিল। আমরা আগে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে জমে থাকা পানিতে লার্ভা পেতাম, কিন্তু এবারে সদ্য কেটে ফেলা নারিকেল গাছের গর্তে জমে থাকা পানিতেও লার্ভা পেয়েছি। লার্ভা মেরে ফেলার বিষয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা আছে, কিন্তু অবহেলা ও অলসতার কারণে এরা পানি পরিষ্কার করছে না। পানি পরিষ্কার করলেও সঠিক নিয়মে করছে না। বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১১ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। বরিশাল মেডিকেলে সবচেয়ে বেশি ১৮ জন মারা গেলেও এরা প্রত্যেকে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার গ্রামীণ এলাকায় থাকতেন।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় বজ্রপাতে ২ স্কুলছাত্রের মৃত্যু
বিজ্ঞাপন
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. শ্যামল চন্দ্র মন্ডল বলেন, বরিশালে যেহেতু অ্যাডিস মশা আছে, তাই এবার অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এদের প্রজননও হচ্ছে বেশি। সংগত কারণে রোগীও মিলছে বেশি। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। সচেতন থাকলে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য বিভাগ এ নিয়ে কাজ করছে।
প্রতিনিধি/ এমইউ

