সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঐতিহাসিক যশোরেশ্বরী মন্দিরের ‘কালি মা’য়ের মাথায় থাকা স্বর্ণের মুকুট চুরির অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে পুরোহিত ও সেবায়েতের অনুপস্থিতির সুযোগে দুর্ধর্ষ এ চুরির ঘটনা ঘটে।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এদিকে চোরের পরিচয় শনাক্ত করতে বা চোর ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মন্দিরে তালা লাগিয়ে বাড়িতে চলে যায় পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জী। একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্বে থাকা রেখা রানী পূজার কাজে ব্যবহৃত প্লেট ও গ্লাস পরিষ্কারের জন্য মন্দিরের প্রবেশদ্বারের চাবি খুলে। এসময় তিনি কিছু সরঞ্জামাদী পাশের ভবনে রেখে বাকি জিনিসপত্র নিতে পুনরায় মন্দিরে ঢুকে ‘কালি মা’য়ের মাথার মুকুট দেখতে না পেয়ে বিষয়টি সবাইকে জানান।
মন্দিরে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে দেখা গেছে ২৪/২৫ বছরের এক যুবক দুপুর দুইটা ৪৯ মিনিটে মন্দিরে প্রবেশ করে। এসময় স্বাভাবিকভাবে সে মন্দিরে ঢুকে ‘কালি মা’য়ের পেছনে দাড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে মুকুট খুলে নিয়ে ‘টি’ শার্টের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। জিন্সের প্যান্ট ও সাদা ‘টি’ শার্ট পরিহিত ওই যুবক মুকুট খুলে নেয়ার আগে এক সেকেন্ডের জন্য পাশে কেউ রয়েছে কিনা পর্যবেক্ষণ করলেও তাকে কোনো রকম বিচলিত মনে হয়নি। সমগ্র ঘটনা মাত্র ১০/১২ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটেছে বলে ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। মন্দিরে প্রবেশ করে মুকুট নেওয়া যুবককে বেশ প্রশিক্ষিত ও পরিকল্পনামাফিক সে কাজটি করেছে বলে ধারণার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জী বলেন, তিনি দুপুর দুইটার একটু আগে মন্দিরে তালা লাগিয়ে বাড়িতে যান। এসময় সেবায়েতের দায়িত্বে থাকা রেখা রানীকে চাবি দিয়ে ভেতরের অপরিষ্কার সরঞ্জামাদীসমুহ পরিষ্কারের নির্দেশনা দেন। দিলীপ ব্যানার্জী আরও জানান তিনি বাড়িতে যাওয়ার প্রায় ৩০/৪০ মিনিট পরে দর্শনার্থীদের একজনের মাধ্যমে মা’য়ের মাথার মুকুট চুরির খবর পান।
বিজ্ঞাপন
সেবায়েতের দায়িত্বরত রেখা রানী বলেন, তিনি মন্দিরের মূল গেটের চাবি খুলে জিনিসপত্র পাশের কক্ষে রাখতে যান। দুই/তিন মিনিটের মধ্যে ফিরে অপরাপর জিনিসপত্র নিতে এসে মায়ের মাথার মুকুট চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন।
এদিকে ঘটনার পর স্থানীয়রা ‘কালি মা’য়ের মুকুট চুরি জন্য পুরোহিতকে দায়ী করেছেন। ঈশ্বরীপুর এ সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপন মন্ডল জানান চুরির বিষয়টি তিনটার আগে সবাই জানলেও পুরোহিত প্রায় দুই আড়াই ঘণ্টা বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। এমনকি শুরুতে তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখাতে আপত্তি করেন। ঘটনার পরপরই ভিডিও ফুটেজ দেখার সুযোগ মিললে উপস্থিত দর্শনার্থীদের সহায়তায় হয়ত বা চোরকে চিহ্নিত করা সহজ ছিল।
এদিকে, যশোরেশ্বরী মন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া প্রতিমার মাথার স্বর্ণের মুকুট চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে উদ্বেগ জানায় দেশটির হাইকমিশন।
ওই ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে সাতক্ষীরা জেলার যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে যে মুকুট উপহার দেওয়া হয়েছিল, সেটি চুরি হয়ে যাওয়ার খবর আমরা দেখেছি। আমরা এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং চুরির তদন্ত, মুকুট উদ্ধার ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
অপরদিকে, চোর ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে পুরস্কার ঘোষণা করে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয় চোরকে ধরিয়ে দিতে বা কোনো সন্ধান বা শনাক্তে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশকে সহায়তার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা মহোদয় সন্ধানকারীকে বিশেষ পুরস্কারে পুরস্কৃত করিবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, মন্দিরের মুকুট চুরির বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া চোর ধরতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সাতক্ষী জেলা পুলিশ চোরকে শনাক্ত করে ধরতে সক্ষম হবে।
উল্লেখ্য, সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে ‘মা কালি’র একান্ন পীঠের এক পীঠকে কেন্দ্র করে শ্যামনগর উপজেলা সদর থেকে মাত্র কিলোমিটার দুরবর্তী ঈশ্বরীপুর গ্রামে গড়ে ওঠে যশোরেশ্বরী মন্দির। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য সনাতন ধর্মের দর্শনার্থী উক্ত মন্দিরে থাকা ‘কালি মা’য়ের দর্শনসহ পূজা দিতে আসেন।
প্রতিনিধি/এসএস