ফরিদপুরের সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমানের (৩০) বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কামরুল ইসলাম। মামলায় তার সাবেক বডিগার্ড পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনকেও (৩৫) আসামি করা হয়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৭ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ২
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদুল হাসান লাবলু বলেন, বিচারক বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আমি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম। ২০২২ সালের মার্চ মাসে আসামি নগরকান্দার সাবেক সার্কেল এএসপি সুমিনুর রহমান আমাকে ফোন করে বলেন, বিএনপি দল করে শান্তিতে থাকতে হলে আমাকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে, নইলে এক রাতও বাড়িতে ঘুমাতে দিবো না। আমি তার দাবি করা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তিনি আমাকে হেনস্তা ও আর্থিকভাবে ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
এরই মধ্যে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সালথার রামকান্তপুর ইউনিয়নের শৈলডুবি গ্রামের আমার প্রতিবেশী ইজিবাইকচালক আলী মাতুব্বরকে কে বা কারা হত্যা করে নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের শ্রীরামদিয়া মহাসড়কের পাশে একটি পুকুরে ফেলে রাখে। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ১ মার্চ নগরকান্দা থানায় আলী মাতুব্বরের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে হত্যা মামলা করেন। হত্যা মামলাটি পরিচালনা করছিলেন সাবেক এএসপি সুমিনুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: বরিশালে অফিস কক্ষে ভূমি কর্মকর্তার ঝুলন্ত লাশ
এজাহারে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ২৬ মার্চ সুমিনুর রহমান আমাকে তার অফিসে যেতে বলেন। আমি তার অফিসে যাওয়া মাত্রই থানার অফিসারদের ডেকে এনে আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেন। পরে আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে লাঠি দিয়ে মারপিট করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বলেন, তুই বিএনপি করিস। তোকে ক্রসফায়ার দেবো। একপর্যায় তিনি আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
আমার স্ত্রী নাসরিন আক্তার গরু বিক্রি ও ধার-দেনা করে আট লাখ টাকা এএসপি ও তার বডিগার্ডের কাছে দিয়ে আসে। বাকি ২ লাখ টাকা না দেওয়ায় তিনি আমাকে ফরিদপুর ডিবি অফিসে নিয়ে ইলেকট্রিক শকসহ অমানবিক নির্যাতন করেন। পরে রিমান্ডে এনে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন। সে সময় আমার পরিবার তাকে আরও এক লাখ টাকা দেয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী কামরুল ইসলাম বলেন, আলী মাতুব্বর হত্যায় আমাকে ধরে নিয়ে ৯ লাখ টাকা দেওয়ার পরও অমানবিক নির্যাতন করেন সুমিনুর রহমান। আমি তার নির্যাতনে দীর্ঘ দিন কারাগারের মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এরপর আমি জেল থেকে বেরিয়ে মামলা করার সাহস পাইনি। তবে বর্তমানে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করায় মামলাটি করেছি। আশা করি ন্যায়বিচার পাবো।
মামলার বিষয়ে ফরিদপুরের সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, সালথার ইজিবাইকচালক আলী মাতুব্বর হত্যার ঘটনা তদন্তে কামরুল আসামি হিসেবে শনাক্ত হয়। মামলাটি এখনও পিবিআই তদন্ত করছে। হত্যা মামলায় কামরুল আসামি হওয়ায় আমার ওপর তিনি ক্ষিপ্ত হন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি সুবিধা নেওয়ার জন্য এ নাটক সাজিয়েছেন।
প্রতিনিধি/ এমইউ

