বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

চট্টগ্রামে তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণ ও আগুন 

বিপিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যা জানা গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

বিপিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবদেনে যা জানা গেল

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ণ রিফাইনারির ডলফিন জেটিতে পেট্রোলিয়াম জ্বালানিবাহী জাহাজে বিস্ফোরণ ও আগুন লাগার ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি।

বেঁধে দেওয়া সময়নুযায়ী সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতেই বিপিসির প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির আহবায়ক ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত। 


বিজ্ঞাপন


এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) বিকেলে। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আবুধাবি থেকে প্রায় ৯৮ হাজার ৩৮৩ মেট্রিক টন মারবান ক্রুড অয়েলবাহী মাদার ভ্যাসেল এমটি ওমেরা লিগেসি গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুতুবদিয়া বহির্নোঙরে আসে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ক্রুড লাইটারিং শুরু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে এমটি বাংলার জ্যোতি ১১ হাজার ৭১৬ দশমিক ৪৪৬ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল নিয়ে ডলফিন জেটি-৭ এ আসে। 

সকাল ১০টায় খালাস শুরু হয়। সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে ক্রুড খালাসের সময় জাহাজের সম্মুখভাগে বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন লাগে। দুপুর সাড়ে ১২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে তিনজন নিহত হন। তন্মধ্যে একজন জাহাজের ডক ক্যাডেট ও দুইজন বিএসসির মেরিন ওয়ার্কশপের কর্মচারী।

প্রতিবেদনে এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজের সম্মুখভাগে অবস্থিত ফোর পিক স্টোর (জাহাজের রশি, নোঙর, স্পেয়ার পার্টস রাখার স্থান) হতে বিস্ফোরণের ফলে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ফোর পিক স্টোর-এ বিপুল পরিমাণ ফ্লামেবল গ্যাস জমা হওয়ার কারণে এ ধরনের তীব্র বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে কমিটি মনে করে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে জাহাজের সম্মুখভাগ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন এমটি বাংলার জ্যোতি ও এমটি বাংলার সৌরভ জাহাজ দুটি ১৯৮৭ সালে নির্মিত। জাহাজ দুটির আয়ুস্কাল প্রায় ৩৭ বছর। এই দুইটি জাহাজের বিকল্প জাহাজ দেশের অভ্যন্তরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ ধরনের জাহাজের বিকল্প না থাকায় উক্ত জাহাজ ২টি যথাযথ মেরামত/রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে চালু রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনার পূর্বে জাহাজ হতে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল খালাস সম্পন্ন হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জাহাজে বিদ্যমান অবশিষ্ট প্রায় ১০ হাজার ৯১৬ দশমিক ৪৪৬ মেট্রিক টন কার্গো নিরাপদে রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে কার্গোর গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যাচ্ছে। আগুন কার্গো ট্যাংকে ছড়িয়ে পড়লে জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারতো।

বিএসসি'র সূত্রে জানা যায়, জাহাজে বিদ্যামন অবশিষ্ট কার্গো খালাসের লক্ষ্যে জাহাজের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি পরিদর্শন করবেন। জাহাজটি নিরাপদ হিসেবে প্রত্যায়িত হলে জাহাজের অন্যান্য মেশিনারিজ ঠিক থাকা সাপেক্ষে কার্গো খালাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কার্গো খালাস সম্পন্ন করতে প্রায় ২২ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হবে। কার্গো খালাস সম্পন্ন করা হলে জাহাজটি মেরামত/ সংস্কারের উদ্দেশ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন—

এছাড়া অপর লাইটার জাহাজ এমটি বাংলার সৌরভ কার্গোবোঝাই করে ডলফিন জেটি-৭ এ অপেক্ষায় রয়েছে। এমটি বাংলার জ্যোতি সরিয়ে নেওয়ার পর এমটি বাংলার সৌরভ ডলফিন জেটি-৭ এ বার্থিং করবে। মাদার ভ্যাসেলে বিদ্যমান অবশিষ্ট কার্গো এমটি বাংলার সৌরভ এর মাধ্যমে খালাস সম্পন্ন করা হবে।

প্রতিবেদন চারটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো—

১। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বিদ্যমান লাইটার জাহাজ দুইটির ব্যবহারের উপযুক্ততা নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠনের জন্য বিএসসিকে অনুরোধ করা যেতে পারে।

২। বিএসসির লাইটার জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতি ও এমটি বাংলার সৌরভ ব্যবহার করে ক্রুড অয়েল লাইটারিং কার্যক্রম পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল খালাসের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অপারেশন অ্যান্ড মেনটেনেন্স ঠিকাদার নিয়োগ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা গেলে নিরাপদে ক্রুড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে।

৩। এসপিএম এর মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপারেশন অ্যান্ড মেনটেনেন্স ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজকে কার্যকরভাবে ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব কি না বা সম্ভাব্য বিকল্প এর বিষয়ে বিএসসি’র মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে।

৪। জেটিসমূহে বিদ্যমান অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাদি আরও আধুনিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় পতেঙ্গা ইস্টার্ন রিফাইনারির ৭ নং ডলফিন জেটিতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন বাংলার জ্যোতি ট্যাংকার জাহাজটিতে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকান্ড ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির ফায়ার ফাইটিং টিম অগ্নিনির্বাপণে কাজ করে। এ ঘটনায় জাহাজের ডেক ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা, বিএসসির ফোরম্যান নুরুল ইসলাম ও শ্রমিক মো. হারুন নিহত হন।

এ ঘটনা তদন্তে তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএ) এবং বিএসসি। তম্মধ্যে বিপিসির গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এসময় কমিটির অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্ল্যানিং ও শিপিং) মো. মোস্তাফিজার রহমান, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (কার্গো সুপারভিশন অ্যান্ড অপারেশন) ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার, বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মো. জাহিদ হোসাইন, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মুজিবুর রহমান চৌধুরী, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) আসিফ মালিক ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) মো. হেলাল উদ্দিন। 

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর