শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইউনিয়ন পরিষদে ঢুকে চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু 

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নঈম উদ্দীন সেন্টুকে (৭০) নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের একাধিক গুলিতে তার মৃত্যু হয়।


বিজ্ঞাপন


এ ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বিভিন্ন স্থানে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে এসে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিলেও এলাকায় বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করেছে।

নঈম উদ্দীন সেন্টু ফিলিপনগর এলাকার মৃত মতলেব সরকারের ছেলে।

noum_uddin-MUDER-2409301306

তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি। ২০২১ সালের  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চশমা প্রতীকে নির্বাচিত হন।


বিজ্ঞাপন


নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সারওয়ার জাহানের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। এর পরে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

WhatsApp_Image_2024-09-30_at_16.22.07_6cfef9a1

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রতিদিনের মতো সকালে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের নিজ কক্ষে বসে পরিষদের কাজ করছিলেন চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন। বেলা ১১টার দিকে কক্ষের পেছনের জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে দুই রাউন্ড গুলি করে। এসময় তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে দুবৃত্তরা সমনের ফটক দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে আরও দুই রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

Daulatpur-police-station-66fa4e1b1d7f3

গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে তাদের লক্ষ্য করেও গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা।  খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে এলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে  ঘটনাস্থলে যেতে বেগ পেতে হয়। গণমাধ্যম কর্মীদের বেগ পেতে হয় তথ্য সংগ্রহে। সংবাদ কর্মীদের ওপর মারমুখী আচরণ করেন বিক্ষুব্ধরা। এসময় পুলিশকে ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে অবরোধ করে রাখেন স্থানীয়রা।

যার ফলে প্রায় ৩টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা সেন্টুর লাশ ওই কক্ষের মেঝেতেই পড়ে থাকে।

পরে খবর পেয়ে র‌্যাব, বিজিবি, এবং সেনা সদস্যরা ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এবং সেনা সদস্যদের সহযগিতায় বেলা তিনটার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।

আরও পড়ুন

নারায়ণগঞ্জে ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

বেলা দুইটার দিকে ফিলিপ নগর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা ঘিরে রেখেছে। ভেতরে পুলিশ এবং র‌্যাব সদস্যরা কাজ করছে। ভবনের চেয়ারম্যানের কক্ষের মেঝেতে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে।

এই ঘটনার পর পরই সেন্টু চেয়ারম্যানের সমর্থকরা এলাকার কয়েকটি বাড়িতে এবং ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় তারা লুটপাট করে বাড়িতে এবং দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিএনপির রাজনীতি করলেও রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার সখ্য ছিল।

KushtiaDH057220240930received2318369231831104

দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা বলেন, চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেনটু একসময় উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আর দলীয় রাজনীতি করেন না।

এবিষয়ে ঘটনাস্থলে থাকা গ্রাম পুলিশের সদস্য নাসির উদ্দীন বলেন, ১১টার দিকে হঠাৎ ৩ থেকে ৪টা গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে  বাইরে এসে দেখি চেয়ারম্যান তার ঘরের ভেতরে পড়ে আছে। গুলিগুলো পরিষদের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে করা হয়েছে বলে জনান তিন।

WhatsApp_Image_2024-09-30_at_16.22.07_ade7a254

এদিকে তার জামাতা হাসিবুর রহমান বিজয় ও ছেলের বৌ শামিমা খাতুন বলেন, আমার শ্বশুরের সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। আমরা গুলির খবর পেয়ে এখানে এসে শুনি তিনি মারা গেছেন।

ঘটনাস্থলে থাকা কুষ্টিয়ার মিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, চেয়ারম্যান নিজ কক্ষের চেয়ারেই বসে ছিলেন। তাকে পেছন থেকে জানালা দিয়ে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই ঘটনায় ঘাতকদের গ্রেফতারের লক্ষে পুলিশের একাধিক টিম ইতোমধ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর