নেত্রকোনায় ভোক্তা অধিদফতরের অভিযানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে প্রসাধনী ব্যবসায়ীদের বাক-বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের বড় বাজার এলাকায় প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
অভিযানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক প্রীতম সোহানসহ জেলার বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমন্বয়করা বলেন, এখানকার কিছু প্রসাধনী ব্যবসায়ী বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করছেন। যেগুলো অবৈধ ও কিছু ক্ষেত্রে এগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, অবৈধ বা অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী কমিটির পক্ষ থেকে নিষেধ করা আছে। কেউ বিক্রি করলে কমিটি এর দায় নেবে না। সেটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ, এর দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে।
মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক প্রীতম সোহান ও জেলা সমন্বয়কদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান শুরু করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম।
বিজ্ঞাপন
অভিযানের এক পর্যায়ে একটি দোকানে অনুমোদনহীন প্রসাধনী সামগ্রী পাওয়া গেলে ওই দোকান মালিককে জরিমানা করা হয়। অপর একটি দোকানে থাইল্যান্ডের একটি পণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা নিয়ে সমন্বয়কদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সমন্বয়কদের দাবি, এখানকার প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা নারী সমন্বয়কদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। এমনকি তাদের গায়ে হাত দিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা এখানে ঘটেনি।
সমন্বয়ক প্রীতম সোহান বলেন, আমি নেত্রকোনাবাসীকে বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে আছি। আমরা চেষ্টা করছি, যেন সংস্কার করতে পারি এবং আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে। তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। কিন্তু আপনারা সোচ্চার না হলে এই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব না। আপনাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। আপনারা সবাই একসঙ্গে কথা বলবেন। আমরা সবকিছু রিজেনেবল দামে চাই।
তিনি আরও বলেন, একটি পণ্য থাইল্যান্ডে ১১৫ বাত। সে হিসেবে থাই বাত ৬ টাকা করে হলে বাংলাদেশি টাকায় এটার দাম হবে ৬৯০ টাকা। কিন্তু এখানকার একটি দোকান আমার থেকে এই পণ্যটির দাম নিয়েছে ১০৫০ টাকা। এটা কি মানা যায়? ৬৯০ টাকার প্রোডাক্ট ৭০০ টাকা, ৮০০ টাকা রাখতে পারেন। কিন্তু ১০৫০ টাকা কীভাবে রাখেন? বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিক ভোক্তা, তাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থের চিন্তা বাদ দিয়ে, দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। আমাদের অর্থনীতির অলরেডি বারোটা বেজে গেছে।
নেত্রকোনা কসমেটিক্স সমিতির সেক্রেটারি ঝন্টু সাহা বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সঙ্গে আমরা সবসময় সহযোগিতা করি। আমাদের যতগুলো দোকান আছে, সবাইকে বলা আছে, কেউ যেন অবৈধ বা দুই নম্বর পণ্য না রাখে। আজকে ছাত্ররা যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছে, সেগুলো আসলে সত্য না। তারা দোকানে এসে বলে, এটা দেন ওটা দেন, ট্রেড লাইসেন্স চায়, ভ্যাট দেওয়ার কাগজ চায়, এগুলো চাওয়ার কি রাইটস তাদের আছে।
ঝন্টু সাহা আরও বলেন, আমরা তো ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তাদের সব রকম কাগজপত্র দেখাতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু ছাত্ররা দোকানে এসে যে আচরণ করে, তাদের কার্যকলাপ দেখে মনে হয় তারাই ম্যাজিস্ট্রেট। এখানে যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে সেটি আসলে আমাদের দোকান মালিক বা কর্মচারী কারও সঙ্গে না। এখানে বাইরের কিছু লোক আছে তাদের সঙ্গে ছাত্রদের কথা কাটাকাটি হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নেত্রকোনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, আমরা এখানে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া পণ্য পেয়েছি। আমরা তাদেরকে আর্থিক জরিমানা করেছি। তাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছি যেন এ ধরনের পণ্য তাদের প্রতিষ্ঠানে না রাখেন।
অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা অভিযানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে আমরা এখানে যারা আছি সবাই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করেছি যেন কোনো ঝামেলা না হয়।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সেনাবাহিনী।
প্রতিনিধি/এসএস