ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জলাবদ্ধ জায়গায় প্রথমবারের মত ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের বাঁশবাজার, সলিমগঞ্জ, নবীনগর পূর্ব ও সাতমোড়া এলাকায় প্রায় ৩ বিঘা জমিতে এই ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।
জানা যায়, হাওর অধ্যুষিত নবীনগর উপজেলার ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষি জমি বর্ষাকালে বছরের ৫ থেকে ৬ মাস জলাবদ্ধতায় থাকে। এই জমিগুলোতেই চার মাস পরে বোরো ধান উৎপাদন হবে। জলাবদ্ধ জমিগুলোতে নতুন কিছু চিন্তা থেকেই ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়। FREAP প্রকল্পের আওতায় উপজেলার চারটি এলাকার পাঁচটি স্থানে এ ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। ভাসমান চাষাবাদে প্রচুর সবজি চাষ হয়। স্বাভাবিক চাষাবাদ থেকে, ভাবমানে চাষাবাদে অনেক বেশি সবজি হয়। এই চাষাবাদে কোনো রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থাকে না। ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে নিরাপদ কৃষির সুযোগ অনেক বেশি। এই চাষাবাদে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। এতে বাঁশের খরচটা একটু বেশি পড়ে। এছাড়া আর তেমন কোনো খরচ নেই। ভাসমান পদ্ধতিতে লতা জাতীয় সবজি (চাল কুমড়া, লাউ, শসা, কড়লা) যেগুলো মাচাই রাখা যায়। এই সবজিগুলোর ফলন অনেক ভালো হয় ও বেশ লাভজনক। উৎপাদিত অসময়ে সবজিগুলো বাজারে বেশ যোগান দিয়ে থাকে। ভাসমান সবজি চাষ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক সরেজমিনে পরিদর্শন ও তদারকি করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।
বিজ্ঞাপন

উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক ইসমাইল মিয়া জানান, টেলিভিশন এই ধরনের ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখেছি। টেলিভিশন দেখে উৎসাহ পাই। উৎসাহ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি ও আগ্রহের কথা প্রকাশ করি। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার এটি বাস্তবায়ন করেছি। ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকার কলমি শাক, শসা, লাউ বিক্রি করেছি। ফসলের উৎপাদন অনেক ভালো, রোগ বালাই খুবই কম। অনেকে আমার এ সবজি চাষ দেখতে আসছে। আশা করি অনেকেই আগামীতে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করবে।
উপজেলার বগডহর গ্রামের কৃষক টিপু মুন্সী বলেন, বর্ষাকালে এই অঞ্চলে সবজি আবাদ হবে এটি আমাদের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতই ছিল। তবে আমাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। আমি ২০ শতক জমিতে লাউ, চাল কুমড়া চাষাবাদ করেছি।
উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার গিয়াসউদ্দিন নাঈম জানান, এই জমিগুলো বছরে ৫ থেকে ৬ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ভাসমান পদ্ধতিতে কমিউনিটি ভিত্তিতে সবজি আবাদ করে ইতোমধ্যে লাউ, শসা, কলমি শাক উৎপাদন করা হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন

নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, নবীনগর উপজেলায় এই প্রথম ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। ভাসমান পদ্ধতিতে কৃষকদের আবাদ কৌশল শিখাতে Flood Reconstruction Emergency Assistance Project প্রকল্পের আওতায় ২ শতাধিক কৃষককে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৫টি প্রদর্শনিতে ভাসমান কাঠামো তৈরি, বীজ ও সার দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রযুক্তিটি নিরাপদ কৃষি উৎপাদন প্রযুক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে সমাদৃত হয়েছে। আগামীতে এই প্রযুক্তিতে সবজি চাষ এই অঞ্চলের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময়।
তিনি আরও জানান, এই পদ্ধতিতে কৃষকদের বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরির খরচটাই একটু বেশি। এছাড়া আর কোনো প্রকার খরচ লাগে না। সেচ লাগে না, পরিত্যক্ত জমিতে এই চাষাবাদ করা হয়। এই চাষাবাদে উৎপাদন অনেক বেশি হয়। এই চাষাবাদে লতা জাতীয় সবজিগুলো বেশি উৎপাদন করা হয়। ফসল গুলো খুবই লাভজনক এবং ভালো হয়।
প্রতিনিধি/টিবি

