শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঘরে বসে ‘চকলেট আপু’র বিক্রি অর্ধলক্ষ টাকা

আব্দুল হাকিম
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২, ০১:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ঘরে বসে ‘চকলেট আপু’র বিক্রি অর্ধলক্ষ টাকা

পড়াশোনার পাশাপাশি চকলেট তৈরি করেন চুয়াডাঙ্গার জেরিন তাসনিম। তার হাতে বানানো চকলেট অনলাইনের মাধ্যমে যায় বিভিন্ন জায়গায়। প্রতি মাসে তিনি প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার চকলেট বিক্রি করেন। এখানেই থেমে নেই, চকলেট উদ্যোক্তা জেরিন এখন পরিচিতি পেয়েছেন ‘চকলেট আপু’ নামে। 

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। মা গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে জেরিন বড়। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি মুসলিমপাড়ায় মা-ভাইকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


কথা বলে জানা যায়, তিনি চকলেট বানানোর উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০২১ সালের মাঝামাঝি। নিজের ফেসবুক পেজে চকলেটের ছবি ও দাম লিখে পোস্ট দেন, পাশাপাশি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপেও চকলেটের ছবি তুলে পোস্ট করতেন। এরপর ক্রেতারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চকলেট কেনেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে চকলেট পাঠাতে শুরু করেন ক্রেতাদের কাছে। এভাবে আস্তে আস্তে অনলাইনে পরিচিতি হয়ে ওঠেন জেরিন। বিভিন্ন জায়গায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে চকলেট আপু হিসেবে।

ঢাকা মেইলকে জেরিন বলেন, অনেক দিন ধরে ইচ্ছা ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করব, যেটা চুয়াডাঙ্গায় আগে কেউ করেনি। ফেসবুকে অনেক উদ্যোক্তাকে দেখতাম। তারা কীভাবে পণ্য নিয়ে কাজ করেন, তা লক্ষ্য করতাম। এবং কীভাবে কাজ করলে লাভজনক হওয়া যায় সেটা পরামর্শ নিতাম আমার বান্ধবীর কাছ থেকে। পরে ২০২১ সালে হাতে চকলেট বানানোর কাজ শুরু করি। অনলাইনে পোস্ট করার পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
jerin chocolate‘প্রথমে আমি হতাশায় পড়ি পরিবার নিয়ে। কারণ, আমার বাবা বেঁচে নেই। পরিবারের কাছে চকলেট বানানোর কথা জানালে পরিবার আমাকে সাপোর্ট দেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা অনলাইন উদ্যোক্তাদের গ্রুপ থেকেও অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। এ কারণে আমি অল্প দিনে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।’
 
জেরিন বলেন, পরিবারের সাপোর্ট পাওয়ায় বাড়িতে বসেই অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পরিবারকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছি। চকলেট বানাচ্ছি, পড়াশোনাও চলছে। পরীক্ষার সময় হলে চকলেট বানানো কমিয়ে দিই, তখন আমি অর্ডার ছাড়া চকলেট বানানোর কাজ খুব কমই করি।
   
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার চকলেট বিক্রি করি।১০০ থেকে ১ হাজার টাকা দামের মধ্যে চকলেট তৈরি করে থাকি। অর্ডারের চকলেটগুলো একটু দাম বেশি হয়। কারণ ক্রেতাদের চাহিদামতো তৈরি করতে হয় সেগুলো।

‘আমার এই চকলেট অনেকে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের পরিবারের জন্য। তবে চকলেট বানানোর উপকরণ ও সামগ্রীগুলো পেতে আমাকে বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ, চুয়াডাঙ্গায় এসব পাওয়া যায় না। ঢাকা কিংবা অন্য জেলা থেকে অর্ডার করে নিয়ে আসতে হয়। এতে আমার খরচ একটু বেশি হয়ে যায়।’ 

জেরিনের মা মরিয়ম বেগম মিলি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার মেয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজ হাতে চকলেট বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করছে এতে আমরা অনেক খুশি। প্রথমে আমার ইচ্ছা না থাকলেও পরে আর বাধা দিইনি। এখন তার বানানো চকলেট ব্যাপকভাবে সাড়া পেয়েছে। আমিও তার এ কাজে সহযোগিতা করি।’
jerin chocolateপ্রতিবেশিরা বলেন, ‘জেরিন খুব ভালো চকলেট তৈরি করে। চকলেটগুলো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ছড়িয়ে পড়েছে। জেরিন তাসনিমের ডাকনাম এখন ‘চকলেট আপু’।


বিজ্ঞাপন


রোকেয়া নামের এক প্রতিবেশি বলেন, ‘চকলেটগুলো খুবই সুস্বাদু। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তার কাজ করছেন, এটা দেখে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরাও উৎসাহী হচ্ছেন। অনেকে দেশে বেড়াতে এলে যাওয়ার সময় তার চকলেট কিনে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে।’

দেশসেরা কৃষাণী ও তরুণ উদ্যোক্তা মেরিনা জামান মমি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে জেরিন কনিষ্ঠ। সে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয় করছে। তার চকলেট আসলেই সুস্বাদু। আমরা সব সময় তাকে সহযোগিতা করি। তাকে দেখে অন্য নারীরাও যেমন উৎসাহিত হচ্ছে, তেমনি অনলাইন উদ্যোক্তাও বাড়ছে চুয়াডাঙ্গায়।’

চুয়াডাঙ্গার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাজী ইয়াকুব হোসেন মালিক ঢাকা মেইলকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় ভিন্ন ধরনের এক ইমেজ তৈরি করেছে অনলাইন বিজনেসে নারীর অংশগ্রহণ। বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি দেশীয় খাঁটি পণ্য অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতেও।

প্রতিনিধি/এএ 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর