শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

৫ কোটি টাকার রাজস্ব হারালো নাকুগাঁও স্থলবন্দর

জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর
প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

৫ কোটি টাকার রাজস্ব হারালো নাকুগাঁও স্থলবন্দর

শেরপুরের একমাত্র স্থলবন্দর নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দর। কিন্তু গেল এক বছর ধরে স্থলবন্দরটি দিয়ে ভারতীয় পাথর আমদানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বন্দরের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজস্ব কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আমদানি জটিলতা। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি খরচে ভুটান থেকে নিম্নমানের পাথর আমদানি করে লোকসান গুনছেন তারা। আর এতে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, অন্যদিকে বেকার হয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তাছাড়া কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। মাত্র এক বছরেই সরকার রাজস্ব হারিয়েছে পাঁচ কোটি টাকার ওপরে। তাছাড়া শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে খুব কষ্টে আছেন আর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও শুল্ক বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলেও ২০০২ সালে ১৯টি পণ্যের মধ্যে কয়লা ও পাথর ছাড়া সব পণ্য আমদানি বন্ধ হয়। পরে ২০০৯ সালে বন্দরটি পূর্ণাঙ্গ বন্দর হলেও ২০১৫ সালে স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ২১টি পণ্য আমদানির কথা থাকলেও আমদানি হচ্ছে শুধু পাথর। আগে যেখানে ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক আসত, এখন শুধু ভুটান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি ট্রাক আসছে। কিন্তু কেন ভারত থেকে আসছে না ট্রাক। এতে কর্মচাঞ্চল্য জেলার একমাত্র নাকুগাঁও স্থলবন্দর চলছে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। কিন্তু কি কারণে ভারতীয় পাথর আনা যাচ্ছে না বাংলাদেশে এ নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে নাকুগাঁও স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছে প্রায় পৌনে ছয় কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে পাঁচ কোটি চার লাখ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতীয় নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য পরিবহন করার কথা, তার চেয়ে ছয় টন বেশি পণ্য পরিবহন করতে জেলার রাজস্ব বিভাগের মৌখিক নির্দেশনা আছে। আর এ কারণেই ভারত থেকে পাথর আমদানি করতে পারছেন না দেশের ব্যবসায়ীরা। ফলে গেল অর্থবছরের গোড়ার দিকে এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সব পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। আর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ছয় চাকার ট্রাকে ৯ টন, ১০ চাকার ট্রাকে ১৫ টন, ১২ চাকার ট্রাকে ১৯ টন ও ১৪ চাকার ট্রাকে ২৪ টন পণ্য আমদানি করলেও জেলার রাজস্ব কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশনা প্রতিটি ট্রাকেই বাড়তি আরও ছয় টন পণ্য আনতে হবে। কিন্তু ভারতের ব্যবসায়ীরা বাড়তি পণ্য না দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আমদানি। এতে বাধ্য হয়ে ভুটান থেকে বাড়তি খরচে নিম্নমানের পাথর আমদানি করে লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা।


বিজ্ঞাপন


ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন বর্ডার দিয়ে একই নিয়মে পাথর বাংলাদেশে ঢুকে। কিন্তু আমাদের এখানে কাস্টমস ভারতের পাথর ঢুকতে দেয় না। কাজেই আমরা চাই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই সমস্যা সমাধান করুক।’

আরেক ব্যবসায়ী সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘ভুটান থেকে কিছু পাথর আসতেছে। কিন্তু তাও নিম্নমানের। গুণগত মান খারাপ থাকায় ওই পাথরগুলো আমরা বিক্রি করতে পারছি না। আমাদের এখানে শ্রমিকরা বসে থাকছে কাজের জন্য। মূলত আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। একই সঙ্গে সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই দ্রুত এর সমাধান চাই আমরা।’

আরও পড়ুন: গোবিন্দগঞ্জে পল্লী উদ্যোক্তারা পেলেন ঋণ

শ্রমিক লাল মিয়া বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে বন্দরে আসি, সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে চলে যাই। সারা দিন বন্দরে বসে থাকি। কোনো কাজ নাই।’

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া জানান, ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত ভারতীয় পাথর ও কায়লা আনার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে বলেন, তাতে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হবে এবং তাদের জীবনযাপন সহজ হবে।

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল অভিযোগ করেন, বন্দর বন্ধ রয়েছে কাস্টমসের অসহযোগিতার কারণে। তিনি বলেন, ‘আগে ১০ চাকার গাড়িতে ২১ টন, ছয় চাকার গাড়িতে ১২ টন পাথর আমদানি হতো, যা এখন সিলেট বর্ডার দিয়েও আসছে। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তা সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে ১০ চাকার গাড়িতে ২৮ টন ও ছয় চাকার গাড়িতে ১৮ টন পণ্য আনতে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম মেনে নিতে পারছে না, ফলে আমদানি বন্ধ রয়েছে। দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।’

শেরপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের সহকারী কমিশনার ফরিদুল আলম জানান, জানুয়ারি থেকে ভারতীয় পাথরের আমদানি বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘পোর্ট কখনও বন্ধ হয়নি। আমদানিকারকরা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাথর আসছে না বলে জানিয়েছেন, তবে ভুটানের পাথর আসছে। ভারতীয় পাথর কেন আসছে না, সে বিষয়ে আমি জানি না।’

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর