রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু

জেলা প্রতিনিধি, যশোর 
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু হয়েছে। তবুও স্বস্তি মিলছে না ব্যবসায়ীদের মনে। ব্যবসায়ীরা এই মুহূর্তে পণ্য খালাস করে নিজ জেলা বা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করছে যে এসব পণ্য বন্দরে আছে ভালো আছে।

তবে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ, বন্দর, ব্যাংক, অফিস আদালতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। কাজ চলছে আগের মতো। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: আখাউড়া স্থলবন্দরে স্থবিরতা, রফতানি আয়ে ভাটা

সারা দেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন, দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগ ও কারফিউয়ের কারণে পাঁচ দিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে বন্ধ ছিল আমদানি-রফতানি বাণিজ্যসহ খালাস প্রক্রিয়া। তখন স্থবির হয়ে পড়ে বেনাপোল বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। গোটা বন্দর এলাকায় ছিল না কোনো কোলাহল।

বিশেষ ব্যবস্থায় পচনশীল পণ্য আমদানি হলেও তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে হিমশিম খায় ব্যবসায়ীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ছিল গোটা বন্দর এলাকায়।

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল বুধবার (২৪ জুলাই) আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। অটোমেশনে এ দিন শুল্কায়ন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


এ দিন প্রায় ৩০০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ৫০ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়েছে। এর আগে কারফিউ চলাকালে গত পাঁচ দিন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। এ সময় ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা হাজারো ট্রাকের সারি কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়। বেনাপোলেও সৃষ্টি হয় ‘ট্রাকজট’। এই পাঁচ দিনে আমদানি খাতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়

বেনাপোল সোনালী ব্যাংকে প্রতিদিন রাজস্ব খাতে জমা পড়ে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। তবে শুল্ক কর্মকর্তারা বলছেন সব কিছু স্বাভাবিক হলে রাজস্ব ঘাটতি থাকবে না।

ক্ষতি পোষাতে সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমস হাউজ খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো। এ ক্ষেত্রে বন্দরের ওভারটাইম চার্জ ও ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

সরকারের রাজস্ব আদায়ের ক্ষতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কাঁচামালে। শিল্প প্রতিষ্ঠানে ক্ষতির পরিমাণ জানা না গেলেও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসাসহ অন্যান্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার ওপরে বলে তারা জানিয়েছেন। অগ্নিসংযোগ ও পরে কারফিউয়ের কারণে দুরপাল্লার পরিবহন চলাচল করতে না পারায় ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য বেনাপোল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা সম্ভব হয়নি।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী জানান, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর থেকে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক পণ্য লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। পাঁচ দিন বন্দর ও কাস্টমস বন্ধ থাকায় তাদের ৫০ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো হলে এবং বন্দর খোলার পর বেনাপোল থেকে ট্রাক ভাড়া বাড়বে দ্বিগুণ। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় মালিকরা ট্রাক বের করতে চাইছে না। এর ফলে ট্রাক সংকটও দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে বুধবার জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কারফিউ শিথিল করে বেনাপোল বন্দর সচল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাসহ অন্য জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে রাতের বেলায় পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একএম আতিকুজ্জামান সনি বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মালামাল লোড-আনলোড চলছে। এজন্য কারফিউ শিথিল করে বেনাপোল বন্দর এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনার সময় বাড়ানো উচিত। কারফিউয়ের আওতামুক্ত রাখতে এখানকার কর্মচারীদের কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। এখান থেকে যাতে নিরাপদে মালামাল সারাদেশে পৌঁছতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বুধবার থেকে কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ অটোমেশন পদ্ধতিতে পণ্য খালাস শুরু করেছে। যে কারণে ট্রাকগুলো বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে পারছে। তবে পেট্রাপোলে ও বেনাপোল বন্দরে ট্রাকজট রয়েছে অনেক।

এদিকে বেনাপোলের ওপারে ভারতের বনগাঁয় পেট্রাপোলে পণ্যবাহী ট্রাকের জট বাড়ছে। পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা ট্রাকের সারি কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে। যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাহারুল ইসলাম জানান, গত তিন দিনে এ পথে প্রায় ছয় হাজার যাত্রী পারাপার হয়েছেন। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছেন চার হাজার ৯৬৭ পাসপোর্টধারী। ওপারে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশি।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার আব্দুল হাকিম বলেন, ‘কারফিউ এর মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তিন দিন ম্যানুয়ালি পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালানো হয়। তবে মঙ্গলবার বিকেল থেকে সার্ভার সিস্টেম ঠিক হয়েছে। বুধবার থেকে সব কার্যক্রম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলছে। এর আগে চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা হয়েছে।’

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল ইসলাম জানান, কারফিউ ও ইন্টারনেটে সমস্যার কারণে দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রফতানি স্থবির হয়ে পড়েছিল। প্রতিদিন যেখানে সাড়ে ৩০০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ১৫০ ট্রাক পণ্য রফতানি করা হতো সেখানে গত তিন দিনে ৫৫ ট্রাক পচনশীল পণ্য খালাস করা হয়েছিল। একইসাথে ভারতে ফেরা পাসপোর্টধারী যাত্রীরা পড়েছিলেন ভোগান্তিতে। ইন্টারনেট সার্ভার চালু না থাকার কারণে বন্দরের অভ্যন্তরে কমপক্ষে পাঁচ হাজার ট্রাক পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বুধবার থেকে ট্রাক চলাচল শুরু হলে অপেক্ষমাণ ট্রাকগুলো বন্দর ছেড়ে যেতে শুরু করেছে। বুধবার থেকে অটোমেশনে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। প্রায় ৩০০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ৫০ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়েছে। আগামী রোববার থেকে পুরোদমে কাজ চলবে বন্দরে।

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর