রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কোটা সংস্কার আন্দোলন

ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে লাশ হলেন শিবলু

নুর উল্লাহ কায়সার, ফেনী
প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে লাশ হলেন শিবলু

বিকেলে ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আবু বকর ছিদ্দিক শিবলু। এরপর রাজধানীর আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চারদিন চিকিৎসাধীন থেকে মারা গেছেন তিনি। এখন দুই সন্তানকে নিয়ে পাগলপ্রায় তার স্ত্রী, দিশেহারা স্বজনরা।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে শিবলুর গ্রামের বাড়ি ফেনীর দক্ষিণ চাঁনপুর এলাকায় গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সঙ্গে। তারা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের সময় গত রোববার (২১ জুলাই) রাজধানীর আবদুল্লাহপুর রেলগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ২৪ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে মারা গেলে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিকেলে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরেন বড় ভাই আবদুল হাকিম বাবলু, স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রিমাসহ স্বজনরা। ওইদিন রাতে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁনপুর এলাকায় তাকে দাফন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


শিবলু দক্ষিণ চাঁনপুর এলাকার ওছি উদ্দিন ভূঞা বাড়ির মৃত আবুল হাসেমের ছোট ছেলে। তার বড় ভাই বাবলু ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। অপর ৫ বোন বিবাহিত। ঢাকায় এলিট পেইন্টের সহকারী হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত থাকার সুবাদে গত প্রায় চার বছর ধরে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টর এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন শিবলু। দুই শিশু সন্তানের একজন ফারহান ছিদ্দিক (৮ বছর) ও নুসাইবা ছিদ্দিক (১০ মাস)। ফারহান উত্তরা এলাকায় স্থানীয় একটি মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

বাড়ির সামনে বসেই কথা হয় আবদুল হাকিম বাবলুর সঙ্গে। প্রথমেই তার মোবাইল ফোনে থাকা একটি ছবি দেখালেন। প্রথম ছবিতে রয়েছে ছেলে ফারহানের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে পাঞ্জাবি পরা হাস্যোজ্জ্বল শিবলু। আরেকটিতে রয়েছে কফিনবন্ধী। মাথার পাশে কানের ওপর বিদ্ধ গুলির চিহ্ন দেখা যায়।

শিবলুর স্ত্রী রিমার উদ্বৃতি দিয়ে বাবলু বলেন, ঘটনার দিন গত ২১ জুলাই রোববার বিকেলে ছেলে ফারহানকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় শিবলু। সেখানে আবদুল্লাহপুর রেলগেটে হাঁটাহাঁটির পর দুইজনে বসা ছিলো। তখন গোলযোগ শুরু হলে বাসায় যেতে ছেলেকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালে শিবলুর মাথার বামপাশে গুলিবিদ্ধ হয়। আশপাশের লোকজন তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক আগারগাঁও নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রিমার কাছ থেকে খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে যাই। ভাইকে বাঁচাতে তার শরীরের চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।

বাবলু বলেন, মঙ্গলবার তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ততক্ষণে ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু একটু একটু করে শিবলুর আঙ্গুল নড়ে ওঠায় সবার মধ্যে আশা জেগে ওঠে। বুধবার সন্ধ্যার পর সেই নড়াচড়াও থেমে যায়। একপর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে।


বিজ্ঞাপন


 

বাবলু আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শিবলুর আর জ্ঞান ফিরেনি। এ কারণে তার কাছ থেকে কোনো কিছুই জানতে পারিনি। ওইদিন পূর্ব উত্তরা থানায় সংঘর্ষ হলেও অপরপ্রান্তে দক্ষিণখান থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় শিবলু। উভয় থানায় শরনাপন্ন হয়েও কেউ মামলা নেয়নি। ফলে পোস্টমর্টেম ছাড়াই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একমাত্র ভাইটিকে দাফন করা হয়।

ইয়াকুবপুর ইউপি মেম্বার জয়নাল আবদীন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শিবলুর লাশ গ্রামের বাড়ি আনা হয়। সেখানে স্বজনদের আর্তনাদে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রাত ১০টায় বাড়ির সামনে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর