শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

যশোরে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, মশা নিধনে নেই পৌরসভার প্রস্তুতি

ইমরান হোসেন পিংকু, যশোর
প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

যশোরে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, মশা নিধনে নেই পৌরসভার প্রস্তুতি

যশোরে বর্ষা মৌসুমে চোখ রাঙাচ্ছে মশাবাহিত রোগ। বিশেষ করে ডেঙ্গুর শঙ্কা উচ্চারিত হচ্ছে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির প্রতিটি মিটিং এ। এরপরেও মশা নিধনের কোনো পরিকল্পনা নেই পৌরকর্তৃপক্ষের। ডেঙ্গুর চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বরাদ্দ।

গত ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত যশোর জেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়  ডেঙ্গু বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় এডিসমশার লার্ভা ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিটি অফিসের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সপ্তাহের প্রথম দিন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করার। এরপরেও পৌরকর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো পরিকল্পনা দৃশ্যমান হচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে যশোরে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। সেসময় এটি এক প্রকার ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪৫১ জন। নারী পুরুষের সঙ্গে আক্রান্তের তালিকায় ছিল শিশুও। সেসময় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যায়। যশোর জেলায় মাত্র ৫৬ জন নারী পুরুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃতের তালিকায় কেউ ছিলেন না। ২০২১ সালের ৪২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর ২০২২ সালে ৪৪৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। আর ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬১ জন। মারা যায় ৩ জন।

ডেঙ্গু ঝুঁকিতে থাকা যশোরে গত কয়েক বছরে মশক নিধনে কার্যকর কোন প্রকল্প গ্রহণ করতে করতে পারেনি যশোর পৌরসভা। শুধু বর্ষা না, সকল ঋতুতেই মশার উপদ্রব আতঙ্কিত করে তুলেছে শহরবাসীকে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হলেও, বরাদ্দের অভাবে আপাতত সমাধানের পথ দেখছেন না তারা।

শহরবাসীর অভিযোগ, শীতের শেষ থেকে মশা বেড়েছে। বর্ষায় মশা আরও মারাত্মক হয়েছে। সন্ধ্যা নামলে মশার উৎপাত আরও বেড়ে যায়। কয়েল না জ্বালিয়ে বা মশারি ছাড়া টিকে থাকা দায় হয়ে গেছে। এছাড়াও যত্রতত্র আর্বজনার স্তূপ, ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দীর্ঘদিন মশা নিধন কার্যাক্রম বন্ধ থাকায় মশার উপদ্রব বাড়ছে।

যশোর পৌরসভা স্টেডিয়ামপাড়া এলাকার সাইফুর রহমান রানা বলেন, মশার যন্ত্রণায় খুব বিপদে আছি। আমাদের এলাকায় রাস্তা এবং ড্রেন থাকলেও সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। এতে সন্ধ্যার পর ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না। আবার কয়েল জালিয়ে রাখলেও ছোট বাচ্চাদের সমস্যা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


আরেক বাসিন্দা শহরের রেলগেট এলাকার গালিব আহম্মেদ বলেন, সন্ধ্যা থেকে মশার উৎপাত শুরু হয়। রাত বাড়লে মশার উৎপাতও বাড়ে। কয়েল জ্বালানোর পরও ঘরে থাকা যাচ্ছে না। এ মশার উৎপাত কমাতে হলে পৌর এলাকার সকল ড্রেন ও ঝোপ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

যশোর সদর হাসপাতল এলাকার এক পথচারী মনজুর হুসাইন বলেন, যশোর পৌরসভার সকল এলাকাসহ হাসপাতাল এলাকায় ড্রেন পরিষ্কার না থাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। তাই মশক নিধন কার্যাক্রম শুরু না হলে বসবাস করা কঠিন হবে।

যশোর পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকতা জায়েদ হোসেন বলেন, মশা নিধন করা সম্ভব না তবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে একযোগে ২৪ থেকে ২৫টি ফগার মেশিন থেকে বছরে দুই থেকে তিনবার সাতদিন বা দশদিনের মশা নিধনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলে। এছাড়াও পৌরসভার যেসব এলাকা থেকে মশা বৃদ্ধির খবর পাই সেসব এলাকায় সঙ্গে সঙ্গে মশা নিধন কার্যাক্রম চালানো হয়।

যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি মশা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ কারণে আমরা পৌরসভার সকলে বসছিলাম কি করা যায়। আমরা মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রামে নামবো। আমরা জানতে পেরিছি, ঢাকা সিটি করপোরেশন একটা নতুন ওষুধ এনেছে। আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে ওই ওষুধ ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছি। এছাড়াও জনগণকে সচেতন করছি যাতে করে কেউ বৃষ্টির পর জমা করা পানি দ্রুত ফেলে না দেয়। এছাড়াও ডাবের খোসা ও টায়ারের ভেতরের পানি বৃষ্টির পর ফেলে দেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে নাগরিকদের সচেতনতা আরও বৃদ্ধি দরকার। পৌরসভা তার সক্ষমতা অনুযায়ী সকল ধরনের কাজ করবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর