শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ীতে রাসেলস ভাইপার ভেবে একটি অজগর সাপের বাচ্চাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন স্থানীয়রা। সামাজিকমাধ্যমে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কালাকুমা গ্রামে গেল শনিবার (২৯ জুন) মধ্যরাতে এই ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
শেরপুর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার রোববার (৩০ জুন) তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কালাকুমা গ্রামের এক রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্য থেকে একটি সাপের বাচ্চা বেরিয়ে আসতে দেখেন স্থানীয়রা। সাপ দেখার পরে রাসেলস ভাইপার মনে করে আতঙ্কিত হয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলা হয়। পরে লোকজন জড়ো হলে বুঝতে পারেন, এটি অজগর সাপের বাচ্চা।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, শেরপুরে রাসেলস ভাইপার সাপের দেখার ঘটনা এখন পর্যন্ত সঠিক নয়। সামাজিকমাধ্যমে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। সবাইকে সর্তক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি, রাসেল ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। এটি দেশীয় সাপ। এর চেয়েও বিষধর সাপ রয়েছে দেশে।
সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ আদনান আযাদ জানান, রাসেল ভাইপার আমাদের দেশীয় সাপ। এর চেয়ে অনেক বিষধর সাপ গোখরা, কেউটে/ কালাচ আমাদের বাড়ির আশপাশেই বাস করে। কিছু লোকজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নানান গুজব ছড়াচ্ছে। রাসেলস ভাইপার অবশ্যই বিষধর সাপ ও এর বিষ মানুষের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু ফেসবুকে যেভাবে একে রাক্ষসের মতো বিশাল ভয়ঙ্কর হিসাবে প্রেজেন্ট করা হচ্ছে ততটা ভয়ংকর এরা না। এর কোনো পাখা নেই যে আপনাকে উড়ে এসে কামড় দিবে। যে কোনো গর্তে, ঝোপঝাড়ে হাত ঢুকানোর আগে সেখানে কিছু লুকিয়ে আছে কিনা তা চেক করে হাত ঢুকাবেন। এরা যেহেতু গ্রাউন্ড স্নেক, তাই জমিতে কাজ করার সময় গাম বুট পড়ে কাজ করতে হবে। কোনো সাপ দেখলেই পালোয়ানী দেখাতে তা ধরতে ও মারতে যাবেন না। এতে কামড় খাবেন। মনে রাখবেন সচেতনতাই আমাদের একমাত্র রক্ষাকবচ। যে কোনো সাপের কামড় খেলেই দ্রুত জেলার প্রধান সরকারি হাসপাতালে যাবেন।
বিজ্ঞাপন
শেরপুর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার জানান, রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। সাপ খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এদের রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং কোথাও কোনো বন্যপ্রাণী ধরা পড়লে স্থানীয় বন বিভাগে জানাতে হবে।
শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্বাধায়ক ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, সাপ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবু যদি কাউকে সাপে দংশন করে, তাহলে ওঝা বা কবিরাজের কাছে না গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন। আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম (প্রতিষেধক) মজুত রয়েছে।
টিবি

