উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। বর্তমানে কাউনিয়ার তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তায় ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে গংগাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলায় শতাধিক পরিবার।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, কাউনিয়ার তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢল না আসলে তিস্তার পানি আগামীকাল থেকে আরও কমবে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদী বেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলার গদাই এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন ঝুঁকিতে রয়েছে গংগাচড়ার কোলকোন্দ মাস্টার পাড়ার অর্ধশতাধিক পরিবার। ভাঙন রোধে নিজ খরচে কেউ কেউ বালুর বস্তা ফেলছেন। পরিবারের সব সদস্যরা মিলে নিজ বাড়ি রক্ষায় নেমে পড়েছেন। যার যা সামর্থ্য আছে তাই দিয়ে চেষ্টা করছেন তারা। আবার অনেকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন বাড়িঘর।
এ সময় তারা অভিযোগ করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, সেইসঙ্গে এখনও তাদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে নাই। সরকারকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ নদীর দক্ষিণ তীরে সুরক্ষিত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বিজ্ঞাপন
গদাই এলাকার আব্দুর রহিম জানান, কয়েক দফা নদীতে ভেঙ্গে গেছে বাড়িঘর। এবার ভাঙলে আর কিছু থাকবে না। বাধ্য হয়ে বাধের উপর অথবা অন্য কোথাও স্থান নিতে হবে। এমন অসহায়ত্বের কথা জানান মোজাহার আলী। তিনি বলেন, সংসারই চলে না, তাতে আবার প্রতি বছরে বছরে বাড়িঘর ভাঙে। এমন করে কি আর টিকে থাকা যায়। ছেলে-মেয়েরা এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে বলে, কিন্ত বাপের ভিটা ছাড়তে মন চায় না।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, দিনে তো সারাদিন ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলছি। তারপরও রাতে ঘুম আসবে না চিন্তায়। অনেক সময় ঘুমে থাকতেই ঘর ভাঙি যায়। কোনোমতে জীবন রক্ষা করা হয়। এতো ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় আমাদের। এমন আক্ষেপ আর কষ্টের কথা জানান আরও ভুক্তভোগীরা।
এদিকে তিস্তায় পানি বাড়ায় চরের ঢুষমারা, তালুক শাহবাজ, গদাই, পূর্ব নিজপাড়ার অংশ, গোপীডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, চর প্রাননাথ, শনশনিয়া, চর হয়বতখাঁ, চর গনাই, আজমখাঁর চর গ্রামের নিম্ন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। এছাড়াও আমন ধানের বীজতলা, উঠতি বাদাম খেত পানিতে ডুবে গেছে, সেই সাথে প্রায় অর্ধ শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এরমধ্যে আরও পানি বৃদ্ধি পেলে নতুন নতুন এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব চরাঞ্চলের কৃষকেরা।
গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ই্উএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, তিস্তায় পানি বাড়ায় ভাঙন ঝুঁকিতে অনেক পরিবার রয়েছে। তবে বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে ব্যাপারে সরকারিভাবে সকল ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। পাশাপশি স্থানীয় প্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক নদী পাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এমএইচএম