বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

উঠানে আঙুরের বাগান করে সফল রাজবাড়ীর বাবু

কাজী তানভীর মাহমুদ, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

উঠনে আঙুরের বাগান করে সফল রাজবাড়ীর বাবু

শখের বশে গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে কয়েকটি জাত সংগ্রহ করে বাড়ির আঙিনায় আঙুর চারা রোপণ করেন তিনি। এ বছর পুরো উঠানজুড়ে তৈরি করা মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা পাকা আঙুর। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও মিষ্টি।

রাজবাড়ী সদরে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সরোয়ার হোসেন বাবু। পরীক্ষামূলক বাড়ির আঙিনায় প্রায় ২ শতাংশ জমিতে আঙুর চাষে সফল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তার সংগ্রহে থাকা ১১টি জাতের পাশাপাশি ভারত থেকে আরও ১২টি জাত সংগ্রহ করে বাগান করতে ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ জমি প্রস্তুত করছেন।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_InShot_20240616_121723297

তার এই বিদেশি জাতের আঙুর বাগান দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ছুটে আসছেন অনেকে।

জানা গেছে, অল্প পরিশ্রম ও স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় আঙুর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। আঙুর চাষে বাড়তি কোনো খরচ নেই। জৈব সার প্রয়োগের পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যায় একটি গাছে ৪০-৫০ বছর ফলন পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া বছরে একটি গাছে ৩ বার ফল আসে। প্রতিটি গাছে দেড় থেকে ২ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

মরুর প্রাণী দুম্বার খামার এখন দিনাজপুরে

ফল চাষি সরোয়ার পরীক্ষামূলক আঙুর চাষের পাশাপাশি দেশের ৪০টি জেলায় আঙুরের চারা কাটিং, গ্রাফটিং, গুটি করে বিক্রি শুরু করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষামূলকভাবে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগামায় ফল চাষি সরোয়ার ছাড়া এখন পর্যন্ত জেলায় বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ আর নেই।

thumbnail_InShot_20240616_121811666

সরোয়ার বিশ্বাসের বড় ভাই আজিজুর রহমান বিশ্বাস বলেন, আমার ছোট ভাই ইউটিউব দেখে মাল্টা ও কমলা চাষে সফল হওয়ার পর এবার আঙুর ফল পরীক্ষামূলক চাষ করে সেখানেও সফল হয়েছে। এখন সে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করবে। তার গাছে ধরা আঙুর বাজারের আঙুরের থেকেও বেশি মিষ্টি ও সুস্বাদু। প্রতিটি থোকায় ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম আঙুর ধরেছে। আমার ছোট ভাইয়ের আঙুর ফলের বাগান দেখতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা এসে ভিড় করে।

আঙ্গুর চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থী রফিকুল ইসলাম, শরিফুল মোল্লা, মনিক বিশ্বাসসহ কয়েকজন বলেন, সাধারণত আমরা বাজার থেকে আঙ্গুর কিনে খাই। এই ফল চাষ ইন্টারনেটে দেখেছি। এভাবে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় কখনও আঙুর দেখিনি। আঙুরগুলো অনেক মিষ্টি। প্রতিটি থোকায় ২০০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত আঙুর আছে। সরোয়ারের মতো অন্যরা এ রকম আঙুর চাষ করলে দাম এত বেশি হতো না। আগে ভাবতাম আঙুর চাষে অনেক কষ্ট ও ব্যয়বহুল। কিন্তু এখন দেখি কষ্ট ও খরচ দু’টাই কম। এমনকি আঙুর চাষ লাভজনক।

thumbnail_InShot_20240616_121937261

আঙুর চাষি সরোয়ার হোসেন বাবু বলেন, ছোটবেলা থেকে নিজ বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন শাক সবজি ও ফলের আবাদ করি।  আমার আঙুর চাষের শখ জাগে। তখন ধারণা ছিল আমাদের দেশে আঙুর মিষ্টি হয় না। তারপরও গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে কয়েকটি জাত সংগ্রহ করে বাড়ির আঙিনায় রোপণ করি। গত বছরের চেয়ে এ বছর বিপুল পরিমাণ ফলন দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিদিনই আঙুর দেখতে অনেক মানুষ আসেন। খেয়ে প্রশংসাও করেছেন। যে কারণে আমি পরীক্ষামূলক থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য প্রায় ৭০ শতাংশ জমি প্রস্তুত করেছি। প্রায় ৪০টি জেলায় আঙুরের চারা কুরিয়ারের মাধ্যমে বিক্রি করেছি।

আরও পড়ুন

গারো পাহাড়ে মিষ্টি আঙ্গুর চাষে সফল জলিল, দেখছেন ব্যপক সম্ভাবনা

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযোগী করা গেলে জনগণের পুষ্টি ও উচ্চ মূল্যের ফলের চাহিদা মিটবে। এ আঙুর চাষে তেমন কোনো বিষ বা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। শুধু মাটিতে জৈব সার ও পানি লাগে। খুব অল্প খরচ ও পরিচর্যায় আঙুর চাষ করা যায়। একটি গাছ রোপণের পর প্রায় ৫০ বছর ফলন দেয়। প্রতি মৌসুমে একটি গাছে দেড় থেকে ২ মণ বা তারও বেশি ফলন হয়। একটি গাছে বছরে ৩ বার আঙুর ধরে।

thumbnail_InShot_20240616_121956054

বাবু আরও বলেন, মহামারি করোনার সময় যখন বেকার হয়ে ঘরে বসেছিলাম তখন ইউটিউব দেখে মাল্টা ও কমলা চাষ করে সফল হয়েছিলাম। প্রায় ১০ বিঘা জমির ওপর আমার মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে। প্রায় তিন বছর আমি আমার বাগান থেকে কমলা পাচ্ছি। আমি কমলা চাষেও সফল হয়েছি।

আরও পড়ুন

দিনাজপুরে সৌদির খেজুর চাষে জাকিরের চমক

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জনি খান বলেন, সরোয়ার হোসেন প্রথম এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে আঙুরের চাষ করেছেন। তার উৎপাদিত আঙুর স্বাদ ও গুণে ভালো। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, রাজবাড়ীর মাটি ও পরিবেশ আঙুর চাষের জন্য উপযোগী। মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ আঙুর চাষ ও ফলন দেখে আশপাশের অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সরোয়ারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আশপাশের যারা বেকার যুবক রয়েছেন তারা আঙুর চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর