ঝিনাইদহ-৪ (কালিগঞ্জ) আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। একদিকে রাজনীতি, অন্যদিকে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সখ্যতা আনার হত্যাকাণ্ডে নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে।
এমপি আনারের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন জানান, এখন তারা সপরিবারে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে তিনি ভারতের ভিসা পেয়েছেন এ কথা স্বীকার করেছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে চাননি। ডরিন বলেন, বাবার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে উল্টো-পাল্টা খবর ছড়াচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় ভাইয়ের কোদালের আঘাতে প্রাণ গেল বড় ভাইয়ের
তবে ঢাকায় যাওয়ার আগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে থাকাবস্থায় এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। সেখানে তিনি তার বক্তব্যে সরাসরি স্বীকার করেন যে তার বাবার বিরুদ্ধে যখন জামাত-বিএনপি জোট সরকার দমন-নিপীড়ন চালায়, তখন প্রায় চার বছর তিনি (এমপি আনার) ভারতে পালিয়ে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ২২টি বিভিন্ন ধরনের মামলা চলমান ছিল। বাঁচার জন্য তাকে পরিবার ছেড়ে ভারতে থাকতে হয়েছিল।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম জানান, এমপি আনার তিনবারের কাউন্সিলর এবং একবারের কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া তিনি তিনবারের এমপি। সে যদি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তবে অবশ্যই আমরা তার লাশ চাই। আর যদি সে বেঁচে থাকে, তবে অবশ্যই তাকে ফিরে পেতে চাই।
তিনি আরও বলেন, তাকে নিয়ে যেসব খবর আসছে, তা যদি সত্য হতো - তবে এত দিন তো কিছু না কিছু অবশ্যই জানাজানি হতো। এগুলো মিথ্যা খবর। তার প্রতিপক্ষরা এসব ছড়াচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
তবে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নতুন মোড় নেয় আমেরিকান প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে তার সখ্যতার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর। শাহীনের বিলাসবহুল রিসোর্ট ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের এলাঙ্গী ইউনিয়নে অবস্থিত। সেখানে আনারের যাতায়াত ছিল। শাহীন দেশে এলেই বিভিন্ন সময় আনার সেই রিসোর্টে গিয়েছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রমাণ মিলেছে। যদিও কখনই শাহীনের সঙ্গে আনারের ছবি বা ভিডিও কোনো গণমাধ্যমে এখনও দেখা যায়নি। তবে অজ-পাড়াগায়ে ৪০ বিঘার ওপর শাহীনের সেই রহস্যময় রিসোর্ট, আনার হত্যাকাণ্ডে নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: এক কিশোরের দায়ের কোপে অপর কিশোর নিহত
ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান জানান, আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঝিনাইদহ শহর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ বাবুকে নিয়ে যায় ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। তাকে তার বাড়ি শহরের আদর্শপাড়া থেকে আটক করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরে উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বললেই চলে। মহেশপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস। এলাকাটি ভারত সীমান্ত সংলগ্ন। ৮০ দশক, ৯০ দশক ও ২০০০ সালের পরের প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এখানে চোরাচালানের রমরমা অবস্থা চলছিল। তখন চিনি, শাড়ি-কাপড়, প্রসাধনী, সোনা, গরু এবং মসলার চোরাচালান হতো। এরপর ভারত সরকার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিলে চোরাচালান কমে আসে।
এ বিষয়ে ৫৮ বিজিবি সূত্রে জানা যায়, সব ধরনের চোরাচালান রোধে কাজ করছে বিজিবি। এ বছরের গত ১৬ এপ্রিল বিকেলে ৪০ পিস স্বর্ণের বারসহ দু’জনকে আটক করেছে তারা। এ বছরের ২ মার্চ থেকে পাঁচ কেজি সোনার বার উদ্ধার করেছে বিজিবি। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।
তবে মহেশপুর থানা সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ১৭ জানুয়ারি সোনা চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জেরে ঝিনাইদহের মহেশপুরে প্রতিপক্ষের গুলিতে দু’জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন।
প্রতিনিধি/ এমইউ