খোদ চাঁপাইনবাবগঞ্জেই অন্য জেলার আম বিক্রি হচ্ছে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম’ নামে। জেলার বেশ কয়েকটি বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন এ সব আম। এতে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা, তেমনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
সোমবার (৩ জুন) চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন বাজার, নিউ মার্কেট, রহনপুর বাজার ও শিবগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভোক্তাদের কাছে এ সব আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই উৎপাদিত বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাজারে আসতে আরও তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। তাহলে বাজারে বিক্রি হওয়া আম আসছে কোথা থেকে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কথা হয় একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানান, এখন বাজারে যেসব আম পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই আসছে রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে। সাতক্ষীরা থেকেও কিছু পরিমাণ আম আসছে বলে জানান তারা।
রোববার (২ জুন) সকালে পুরাতন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত তিনটি আড়তে চলছে আম কেনাবেচা। সেখানে আম কেনেন জব্বার আলী নামে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা। কুমিল্লার বাসিন্দা জব্বার আলী থাকেন শহরের শাহবাগ এলাকায়। তিনি জানান, চারদিন আগেও এ বাজার থেকে আম কেনেন তিনি। কিন্তু আম মিষ্টি ছিল না বরং টক টক ভাব ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের মতো স্বাদও নেই। কিন্তু দুইদিনই তার কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
হুজরাপুর ভাড়া বাড়িতে থাকা একটি ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামও আম কিনে প্রতারিত হয়েছেন। গোপালভোগ বলে তার কাছে প্রচলিত গুটি জাতের আম বিক্রি করেছেন বিক্রেতা। ওই আম খেতে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আমসত্ত্ব বানিয়েছেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুনাম রয়েছেন। আর বিক্রেতা বারবার সেগুলোকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলছিলেন। তাই সরল বিশ্বাসে আম কিনে ঠকেছি। আমার স্ত্রী-সন্তানদের মনেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আম ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ থেকে জেলার পুরাতন বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে। রহনপুরের বিভিন্ন এলাকায় আম বিক্রি হচ্ছে বেশ কিছু দিন আগে থেকে। বাজারে ওঠা সব আমই বাইরে থেকে আসা।
পুরাতন বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা থেকে আম আসছে বেশি। বিকেলে আম নামিয়ে সেগুলো ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে। আবার কখনও কখনও খুব ভোরে আম নামিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিক্রির জন্য। পোরশা ও সাপাহারের চেয়ে দাম বেশি পাওয়ায় বাগান মালিকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বিক্রি করতে পাঠান।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, কেউ কেউ সত্য বলেই অর্থাৎ পোরশা-সাপাহারের আম বলেই বিক্রি করছে। আবার কেউ ওই আমই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বলে বিক্রি করছে। বাজারে তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় নির্বিঘ্নে প্রতারণা করে যাচ্ছে কিছু ব্যবসায়ী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাজারে আসতে আরও ৩/৪ দিন সময় লাগবে। গতকালই একজন কয়েকটি গোপাভোগ আম দিয়েছিলেন। সেগুলো খাওয়ার পর মনে হয়েছে পুরোপুরি পাকতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, আমের গায়ে তো আর লেখা নেই যে এটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের। তাই বাইরের আমও এ জেলায় বিক্রি হতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোপালভোগ ও গুটি জাতের আমের পরিমাণ কম হওয়ায় ক্ষিরসাপাতি আমের সময় বাজার জমে উঠবে বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোকাব্বের আলম নাঈম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি জেলায়। তাই এখন বাজার মনিটরিং করতে পারছি না ঠিকঠাক। তবে অন্য জেলার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামে বিক্রি করা প্রতারণার সামিল। এব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/টিবি