উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ৬০ দিন পর মায়ের বুকে ফিরলেন নাবিক মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু। তিনি জলদস্যুদের কবলে পরা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর এবি (অ্যাবল সি ম্যান) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত ১১টায় নিজ বাড়িতে আসেন রাজু। তিনি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে। সন্তানকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা আজিজুল হক মাস্টার ও মা দৌলত আরা বেগম।
বিজ্ঞাপন
রাত থেকে রাজুকে একনজর দেখতে বিভিন্ন যায়গায় থেকে ছুটে আসেন আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাকে কাছে পেয়ে স্বজনদের উচ্ছ্বাস বাড়ে কয়েকগুণ, অনেকের চোখে মুখে তখন আনন্দের বার্তা।
ছেলেকে ফিরে পেয়ে রাজুর মা দৌলত আরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। দীর্ঘদিন পর ছেলেকে পেয়ে ছেলের জন্য তার পছন্দের খাবার রান্না করছেন।
তিনি বলেন, কত কষ্ট সহ্য করেছি, এক আল্লাহ জানে আর আমি জানি। আল্লাহর ওপর ভরসা ছিল। বড় বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে আমার ছেলে আমার বুকে ফিরেছে। একবার ভেবেছিলাম কলিজার টুকরাকে ফেরত পাবো না। আর কারও পরিবার যাতে এ পরিস্থিতিতে না পড়ে, সে দোয়া করি।
নাবিক রাজু’র বাবা আজিজুল হক জানান, গত ঈদে সে যখন ছিল না তখন আমাদের পরিবারে কোনো ঈদের আনন্দ ছিল না। দীর্ঘদিন পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দের মত লাগছে। নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। শিপিং কোম্পানি ও বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ । সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল বলেই এত দ্রুত সম্ভব হয়েছে।
নিরাপদে ফিরে এসে নাবিক রাজু বলেন, গত ১২ মার্চ আমাদের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও। ছিনিয়ে নেওয়া হয় আমাদের কাছে থাকা মোবাইল ও সঙ্গে থাকা ডলার। তারা সবসময় আমাদের অস্ত্রের মুখে রেখেছে । কঠিন এক সময় পার করেছি সবাই। এত দ্রুত কোনও জাহাজ জিম্মি থেকে মুক্তি পায়নি। আমাদের কোম্পানি আন্তরিক ছিল বলেই আমরা বাড়িতে আসতে পেরেছি। আমাদের কোম্পানির সবাইকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাজু সবার ছোট। তিনি স্থানীয় বামনী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বামনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্স সম্পন্ন করে চাকরিতে যোগদান করেন।
প্রতিনিধি/একেবি