‘বাবু যখন একমদ ছোট, তখন ওকে কোলে নিয়েই আমাকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো। পরীক্ষার সময় শাশুড়ি সঙ্গে যেতেন। ওনি বাবুর যত্ন নিতেন। আমার শাশুড়ি মাতৃকালীন সময়ে আমার জীবনটাকে সহজ করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থী অবস্থাতেই আমি মা হয়েছি। জানি, মা হওয়া এতোটা সহজ না। মায়ের দায়িত্ব পালন করা, পরিবারকে সময় দেওয়া, পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টের। কিন্তু বিষয়টাকে আমি খুবই সহজভাবে নিয়েছি।’
আজ রোববার (১২ মে) বিশ্ব মা দিবসে এভাবেই মাতৃকালীন অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা।
বিজ্ঞাপন
সময়টা ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর। করোনায় যখন পুরো পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত, ঠিক তখনই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করা ডা. মো. রাশিদুল ইসলামের সাথে পারিবারিক ধামাঢোলে বিয়ে হয় হাবিবার। তখন তিনি কেবল অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিয়ের মাত্র কয়েক মাস পরই মাতৃত্বের আগমনি সুসংবাদ পান তিনি। ঘর আলোকিত করে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন হাবিবা।
আর এরমধ্যেই করোনার কালথাবা থেকে মুক্ত হতে থাকে পৃথিবী। সচল হতে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সমস্ত প্রতিষ্ঠান। করোনাকালীন লোকসান ঘুচাতে বেড়ে যায় কর্মব্যস্ততা।
এদিকে একটু একটু করে বড় হতে থাকে কন্যা রাইহা ইসলাম। বাড়তে থাকে মাতৃত্বের ব্যস্ততা। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাও চালু হয়ে যায়। কেমন ছিলো তার সন্তান জন্মদানের সে সময়টা, হাবিবা নিজেই জানাচ্ছেন অভিজ্ঞতার কথা, ‘শিক্ষার্থী হিসেবে মা হওয়া একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। সন্তান, পরিবার, পড়াশোনা সব একসাথে চালিয়ে নেওয়া সহজ বিষয় না। তবে, দিনশেষে যখন সন্তানের দিকে তাকাই, তখন যে স্বস্তি ও মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়, তা অকল্পনীয়।’
মা হওয়ার পরও হাবিবার জীবনে তেমন পরিবর্তন আসেনি। কেননা, তিনি যে বিষয়টাকে সহজভাবেই মেনে নিয়েছেন। তিনি যে বিষয়টাকে স্বস্তি ও প্রশান্তির মনে করেছেন। মা হওয়ার আগে-পরের এই পরিবর্তনের বিষয়ে হাবিবা বলেন, ‘আমি আগে যেমন ছিলাম, এখনও তেমনই। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা, হাসি, তামাশায় মেতে উঠি। মানসিক তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। তবে, রুটিন পরিবর্তন হয়েছে। দায়িত্ব বেড়েছে। বাবুকে বাড়িতে রেখে আসি ক্যাম্পাসে। যার কারণে, দুশ্চিন্তা হয় অনেক। এটাই কেবল পরিবর্তন।
বিজ্ঞাপন
জামালপুরের সরিষাবাড়ির এই মেয়ে সংসার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা স্বীকার করে বলতে থাকেন, ‘মা কথাটা যদিও অনেক ছোট কিন্তু, কিন্তু এর মাহাত্ম্য অনেক ভারিও বটে। কেননা, মা হিসেবে সবার সুখ, দুঃখ, আবেগ, অনুভূতিগুলো না বললেও বুঝে নিতে হয়। পরিবারের সকল সদস্যের মুখে হাসি ফুটাতে হয়। মা কথাটার সাথে সাথেই অনেক না বলা দায়িত্ববোধ চলে আসে। এগুলো চাইলেই এড়ানো যায় না।’
হাবিবা বলেন, ‘মা হওয়ার পর আমার দায়িত্ববোধ বেড়ে গেছে। দৈনন্দিন রুটিনের পরিবর্তন হয়েছে। তবে, কাজে-কর্মে পরিবারের সবাই আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। যার কারণে পড়াশোনার তেমন কোন ক্ষতি হয় না। যখন বাবুকে রেখে ক্লাস-পরীক্ষায় যাই, দুশ্চিন্তা লাগে। সন্তানের জন্য মায়ের এই অনুভূতিটা খুবই স্নিগ্ধ, সুন্দর। আমি মা, এটাই আমার বড় পরিচয়।’
শুধু মা হিসেবে নয়, হাবিবা পিছিয়ে নেই ক্যারিয়ারেও। হাবিবার পছন্দের পেশা ব্যাবসা। ভবিষ্যতে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান। এ প্রসঙ্গে হাবিবা বলেন, ‘আমি একজন উদ্যোক্তা হতে চাই। ইতোমধ্যেই আমি একটা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ছোট পরিসরে আমার ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আস্তে আস্তে এটা বড় করবো। ভবিষ্যতে আমার ব্যাবসা করার ইচ্ছে আছে।’
সন্তানকে নিয়ে হাবিবার স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানকে আমরা কখনো কোন কিছুর জন্য প্রেসার দিবো না। তবে, রাইহাকে ডাক্তার বানানোর খুব ইচ্ছে আমাদের। জানি না, আল্লাহ কপালে কী রেখেছেন। কিন্তু, সন্তান মানুষের মতো মানুষ হবে এটাই চাওয়া।’
প্রতিনিধি/একেবি