মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

গাজীপুরে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

আবুল হাসান, গাজীপুর
প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৪, ১২:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

গাজীপুরে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ, জলাবদ্ধতা, মজা পুকুর ও মানুষের অসচেতনতায় এবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে গাজীপুরে। এছাড়াও এ জেলার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন। ফলে ডেঙ্গুর সরাসরি প্রভাব এসে পড়ে এই জনপদে। মশক নির্মূলে সিটি করপোরেশনের উদাসীনতায় এ সমস্যা আরও প্রকট করে তুলছে বলে ক্ষোভ স্থানীয়দের। ‘মশা মারতে কামান দাগানো’ বলে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। সামান্য কাজে অনেক তোড়জোড় বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়। গেল বছরে সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে স্থানীয়রা এমন কথা বলছেন। তাই মওসুম শুরুর আগেই এই জনপদে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। যদিও সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডেঙ্গু মোকাবেলায় তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

আরও পড়ুন

ছুটির দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ৬ জন, মৃত্যু নেই

জানা গেছে, বর্ষা মওসুম শুরুর আগেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ট গাজীপুরবাসী। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয় সর্বত্রই অসহনীয় মশার উপদ্রব। এ যেন মশার রাজত্বে মানুষের অসহায় বসবাস! বর্তমানে গরমের মধ্যে মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। শ্রমিক অধ্যুষিত এই নগরীতে দিন দিন মশার যন্ত্রণা যেন বেড়েই চলছে। গাজীপুরের বাসিন্দারা যেন মশার কাছে অসহায়, জিম্মি। রাতে তো বটেই দিনের বেলায়ও চলছে মশার অত্যাচার। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেক্ট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও সুফল মিলছে না। বিকেল থেকে শুরু হয়, মাগরিবের আজান পড়লেই মশার উৎপাত তীব্র আকার ধারণ করে। বিভিন্ন এলাকার ড্রেন, পুকুর, ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো এখন মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নগরীতে মশার উপদ্রব তাই বেশি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ট নগরবাসী। ঘরে বাইরে বাসা কিংবা অফিস সব জায়গায় মশা। কিন্তু মশক নিধন কর্মীদের মাঠে তেমন দেখা যায় না।

তবে বর্ষা মৌসুমে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে এডিস মশার উপদ্রব। প্রতি বছর এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাই বর্ষা মৌসুমের আগেই মশক নিধনে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। এছাড়া মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন

ডেঙ্গু কাড়ল আরও এক প্রাণ, হাসপাতালে ৩১

টঙ্গী, গাজীপুরা, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর, কোনাবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। অনেকেই ফ্ল্যাটের জানালায় নেট ব্যবহার করা সত্ত্বেও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নিচতলা থেকে শুরু করে ১০তলা পর্যন্ত সবখানেই মশার সমান উপদ্রব। তবে নিম্ন শ্রেণির মানুষদের ভোগান্তি আরও বেশি। সন্ধ্যার পর মশার কামড়ে শিশুরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, মশার যন্ত্রণায় দিন-রাত অসহনীয় যন্ত্রণায় রয়েছি। দিনের বেলাও মশার উপদ্রব থাকে, বিকেলে তা বেড়ে যায় বহুগুণ। অথচ এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একবারও মশার ওষুধ প্রয়োগ করতে দেখছি না।

আরও পড়ুন

ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ৩৫, সর্বোচ্চ ঢাকা মহানগরে

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীতের শেষে আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করেছে। এ সময় মশা বংশবিস্তার ঘটায়। ফলে মশার উপদ্রব অনেক বেশি এখন। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া, গোদসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। সামনে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই মশা নিধনের জন্য সিটি করপোরেশনকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে বড় ধরনের কোনো সঙ্কট তৈরি না হয়।

এ বাপারে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আফজালুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এখন একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত মওসুমে এখানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রতিদিন ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি হন। এবার আগেভাগে প্রস্তুতি না নিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, একদিনে মৃত্যু ৩ জনের

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, এই হাসপাতালে বর্তমানে কোনো ডেঙ্গু রোগী নেই। তবে মশার প্রকোপ রয়েছে। গত মওসুমে এই হাসপাতালে মোট ৩ হাজার ৯২৮ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির শতাধিক ফগার মেশিন কেনা হয়েছে। এছাড়াও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ভেহিকেল মাউন্টেইন’ ফগার মেশিন রয়েছে। ২০১৯ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যখন ডেঙ্গু মোকাবেলায় হিমশিম খায় ঠিক তখনই নিজ উদ্যোগে সিঙ্গাপুর থেকে পোল্যান্ডের তৈরি ২০০ টন মশার ওষুধ এনে সুনাম কুড়িয়েছিলেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময় ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন পৌরসভায় বিনামূল্যে সেসব ওষুধ সরবরাহ করেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু এরপর থেকে মশক নিধন কার্যক্রম যেন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ৫৭টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির শতাধিক ফগার মেশিন রয়েছে। আমরা গত মওসুমে হাজার হাজার টন ওষুধ ছিটিয়েছি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর