উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে যশোরে ‘কিশোর গ্যাং’ আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। নেপথ্যে থাকা কিছু বড়ভাই এই ‘গ্যাং’ মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের লক্ষ্য, নির্বাচনী মাঠে সন্ত্রাসের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। তবে সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাং মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।
নির্বাচনের মাঠে যেকোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে মাঠে থাকবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশেই এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। যশোরে প্রথম ধাপে ইতোমধ্যে দুইটি উপজেলার নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে তিনটি উপজেলা এবং তৃতীয়ধাপে আরও তিনটি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে যশোর সদর উপজেলার ভোট গ্রহণ করা হবে।
যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, যুবমহিলা লীগ নেত্রী ফাতেমা আনোয়ার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল ও যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জয়েল।
আরও পড়ুন
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে সদরে মাঠে রয়েছেন সুলতান মাহমুদ বিপুল, কামাল খাঁ, মনিরুজ্জামান, শাহজাহান কবীর শিপলু ও শেখ জাহিদুর রহমান। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন, জ্যোৎস্না আরা বেগম মিলি, বাশিনুর নাহার ও শিল্পী খাতুন। জেলার হেডকোয়ার্টারখ্যাত ‘সদর’ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তাই গোটা জেলাজুড়েই নানা আলোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েক মাস ধরেই যশোরে নির্বাচনী আবহ বিরাজ করছে। যদিও বিএনপিসহ বিরোধী কোনো দল নির্বাচনে আসেনি; কিন্তু ক্ষমতাসীনদের প্রার্থীরাই নির্বাচনী মাঠ গরমের চেষ্টা করছেন। সভা, সমাবেশ, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তারা জনগণকে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বদ্বী না থাকায় ‘ঘরের মধ্যেই প্রতিদ্বদ্বতা’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ‘হাইব্রিড, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার, অস্ত্র-মাদকের কারবারিও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আর এতে আতঙ্কিত বোধ করছেন নাগরিকেরা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেকটি গ্রুপে অন্তত ৮ থেকে ১৬ জন করে সদস্য রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় একাধিক গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপের সাথে জড়িতদের বয়স ১৪ বছর থেকে ২১ বছর পর্যন্ত। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এই কিশোররা দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এমনকি অপহরণ, বোমাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধেও জড়িত তারা।
যশোর কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়া, পুরাতন কসবা, মুজিব সড়ক, তেঁতুলতলা, রেলগেট, তুলোতলা, রায়পাড়া, শংকরপুর, বকচর, বেজপাড়া, খোলাডাঙ্গা, চাঁচড়া, ভাতুড়িয়া, শংকরপুর বাস টার্মিনাল, রেল রোড, মণিহার, উপশহর, পালবাড়ি, ধর্মতলা, খড়কি, খড়কি কলাবাগান, রেল স্টেশন, বিরামপুর, নীলগঞ্জ, সিটি কলেজপাড়া, বারান্দিপাড়া, পুলেরহাট ও শেখহাটিতে গ্রুপভিত্তিক কিশোর অপরাধী বেশি। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ম্যানসেল, হিটার নয়ন, পিচ্চি রাজা, টাক মিলন, দাতাল বাবু, হাফেজ, ভুট্টোসহ শহরের আলোচিত সন্ত্রাসীরা এলাকাভিত্তিক এই কিশোর গ্যাং’কে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এক প্রার্থী এদের নেপথ্যের বড়ভাই বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরে সন্ত্রাসী তৎপরতা, খুন, চাঁদাবাজি, মাদকের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে ওই অর্ধশত ‘কিশোর গ্যাং’য়ের নাম জড়িয়ে রয়েছে। এই কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যের একাধিক নিয়ন্ত্রণকারী এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বলে সূত্রের দাবি। এ কারণে এই প্রার্থীরা নির্বাচনী পরিবেশ ঘোলাটে করতে কিশোর গ্যাং’কে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাদের টার্গেট, নির্বাচনী মাঠে সন্ত্রাসের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করা; যাতে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রমুখী না হয়।
তবে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণা বা ভোটগ্রহণের সময় কোনো ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা অপতৎপরতা প্রশাসন বরদাস্ত করবে না। নির্বাচনী মাঠ সন্ত্রাসমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। যেকোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে মাঠে থাকবে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যশোর সদরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সবগুলো টিম সার্বক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করছে। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অপরাধপ্রস্তুতির খবর পেলেই পুলিশ সেখানে হানা দিচ্ছে। কিশোর গ্যাং বা কোনো সন্ত্রাসী চক্রের নির্বাচনী মাঠে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না।
প্রতিনিধি/একেবি