গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনের এক কিলোমিটার দূরে ছোট দেওড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনকে একটি যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন ধাক্কা দিলে নয়টি বগি লাইনচ্যুত ও চারজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকালের এই ঘটনায় জয়দেবপুর স্টেশন দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম রুটের ট্রেন চলাচল দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল। বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে অন্তত ১০টি ট্রেন। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি করেছে। বরখাস্ত করা হয়েছে রেলওয়ের তিনজন কর্মচারীকে। এছাড়া ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
জয়দেবপুরের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী মিয়া জানান, বেলা পৌনে ১১টার দিকে টাঙ্গাইল কমিউটার ও মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। রেললাইনের পয়েন্টের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মালবাহী ট্রেনের পাঁচটি এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। কমিউটার ট্রেনটিতে যাত্রী কম ছিল। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা কম। কমিউটার ট্রেনের লোকোমাস্টারসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়েন্টের ভুলের এমটি রেক (যাত্রীশূন্য) ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে আপঘুন্টি স্টেশন মাস্টার হাশেম ও পয়েন্টসম্যান সাদ্দাম হোসেনসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বগি উদ্ধারের জন্য ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর বিকেলে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এছাড়া টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের পেছনের অংশের অক্ষত বগিগুলো বিকল্প ইঞ্জিনের মাধ্যমে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এর দুই ঘণ্টা পর অন্য রেল লাইনের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ইতোমধ্যে রেলের সব বগি তল্লাশি করা হয়েছে। তবে ভেতরে কেউ আটকা নেই। শুধু ট্রেনের চালক ও সহকারী চালকসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়েছে।
ডিসি জানান, সিগন্যাল ভুল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে দুর্ঘটনার পর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যরা কাজ করছেন। এছাড়া ঘটনাস্থলে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গাজীপুরের ৬৩ ব্যাটালিয়নের বিজিবি সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল
ঢাকা ময়মনসিংহ রেলরুটে তেলবাহী ওয়াগনের সঙ্গে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রেনের চালকসহ চারজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আহতরা হলেন, টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের চালক (লোকোমোটিভ মাস্টার) হাবিবুর রহমান, সহকারী চালক সবুজ হাসান ও যাত্রী শরীফ মাহমুদ।
কমিউটার ট্রেনের আহত যাত্রী ও স্বজনরা বলেছেন, রেল কর্মীদের গাফিলতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেলযাত্রা নিরাপদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের চালকসহ তিনজন ভর্তি হয়েছেন। তাদের কেউ মাথায়, বুকে আঘাত পেয়েছেন। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল ও শঙ্কামুক্ত।
প্রতিনিধি/জেবি

